বিনোদন ডেস্কঃদেশে ব্যান্ড মিউজিকের জনপ্রিয়তাকে যাঁরা প্রসারিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম নগর বাউল জেমস। তাঁর নাম শুনলেই একটি ফটোগ্রাফ ভেসে ওঠে সবার মনে, তা এক রকস্টারের অবয়ব। কতশত রাত তাঁর গান শুনে নির্ঘুম কেটে যায় হাজারও তরুণের, যিনি না থাকলে জমে না কোনও উৎসবের আসর। আজ সেই নগর বাউল জেমসের জন্মদিন।
৬০ বছরে পা রাখলেন এই মহাতারকা। ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগা জেলার পত্নীতলা থানার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন তিনি। জেমসের পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম।জেমস নামটি রেখেছিলেন তাঁর বাবা ড. মোজাম্মেল হক।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। মা জাহানারা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। বাবার চাকরিসূত্রে জেমসের প্রথম স্কুল ছিল সিলেটের ব্লু-বার্ড স্কুল। তারপর রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল। কলেজ জীবন কেটেছে নীলফামারী ও সিরাজগঞ্জে। মূলত কলেজ জীবনের পরই জেমসের মাথায় ঢোকে গানের পোকা। পরিবারের কেউ কখনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
যে কারণে বড় ছেলে জেমস সংগীতশিল্পী হতে চান, সেটা মেনে নিতে চাননি বাবা মোজাম্মেল হক ও মা জাহানারা খাতুন। আর তাই অভিমানী জেমসকে ঘর ছেড়ে পথে নামতে হয়। পথের বাপই বাপরে মনা/ পথের মা-ই মা/ পথের বুকেই খুঁজে পাবি/ আপন ঠিকানা’—জেমসের সেই ‘পথের বাপই বাপ রে মনা’ গানের মতো তিনি নিজেও যেন পথের বুকে খুঁজে পেলেন আপন ঠিকানা। গানকে সঙ্গী করে ঠিকানা হয়ে যায় চট্টগ্রামের কদমতলীর পাঠানটুলী রোডে আজিজ বোর্ডিংয়ের ৩৬ নম্বর কক্ষটি।
সেখানেই তাঁর পুনর্জন্ম, সংগীত জীবন পেলেন তিনি। এক সাক্ষাৎকারে জেমস বলছিলেন, ‘আড্ডা আর গান যা-ই হোক না কেন সব ওখানেই। আজিজ বোর্ডিংয়ের দিনগুলো কখনো ভুলব না।তারকা হয়ে ওঠার পর অবশ্য আর কখনোই আজিজ বোর্ডিংয়ে যাওয়া হয়নি জেমসের। তবে যে কক্ষে থাকতেন, সেখানে এখনকার বাসিন্দারা জেমসের জন্মদিনে কেক কাটেন প্রতিবছর।
তবে এই বিশেষ দিনটিকে তিনি কখনোই আলাদা করে ভাবেন না। অংশ নেন না তাঁকে ঘিরে কোনও বিশেষ আয়োজনে। বড়জোর পরিবার ও ব্যান্ডের মানুষগুলোর সঙ্গে বসে ছোট্ট একটা কেক কাটেন। তাতেও তাঁর বেজায় অস্বস্তি। জানা যায়, আজকের বিশেষ দিনটিও রকগুরু কাটাবেন নিজ ঘরেই। ডুবে যাবেন নিজস্ব প্র্যাকটিস প্যাডে। কারণ, আগামী ৫ অক্টোবর নগরবাউল জেমস পারফর্ম করবেন ‘দ্য হাইব্রিড এক্সপেরিয়েন্স ২’ কনসার্টে। এছাড়াও দেশ ও দেশের বাইরে আরও কিছু কনসার্ট রয়েছে।
নিবিড়ভাবে তাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই রকস্টার।গানের ভুবনে জেমসের আত্মপ্রকাশ ১৯৮০ সালে। এ বছর ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড গঠন করেন তিনি। এর ৭ বছর পর প্রকাশ পায় ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম, নাম ‘স্টেশন রোড’। গানগুলোতে দারুণ সাড়া পান তিনি। পরের বছরেই প্রকাশ করেন ‘অনন্যা’ নামে একক অ্যালবাম।
যা জেমসকে সংগীত ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিষ্ঠিত করে। একটা সময় গান দিয়ে জনপ্রিয়তা কিংবা খ্যাতি সবই আসে তাঁর। এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে যায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও। ২০০৫ সালে উপমহাদেশের বৃহত্তম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি বলিউডে ডাক পান তিনি। গান করেন ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায়।
তাঁর কণ্ঠে জনপ্রিয়তা পায় ‘ভিগি ভিগি’ গানটি। এরপর ‘ও লামহে’, ‘লাইফ ইন আ মেট্রো’ ও ‘ওয়ার্নিং’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেন তিনি। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—অকল্পনীয় সুযোগ থাকার পরও বলিউডে স্থায়ী হননি তিনি। কারণ বলিউডের জন্য তাঁকে স্থায়ী আবাস গড়তে হতো ভারতে! তাই দেশ ছেড়ে তিনি পরবাসী হতে চাননি।
এ নিয়ে জেমস বলেছিলেন, ‘বলিউডে তখন ক্যারিয়ার গড়তে পারতাম। খুব সহজ ছিল। কিন্তু সেখানে স্থায়ী হলে আমাকে বাংলাদেশটা ছাড়তে হতো। যেটা আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়। আরও বড় প্রলোভন দিলেও দেশ আমি ছাড়তে প্রস্তুত নই। তাই আর বলিউডে কনটিনিউ করা হয়নি।আপন দেশেই থেকে গেলেন রকগুরু জেমস।
শ্রোতা-ভক্তদের ‘ফিলিংস’ ব্যান্ড থেকে উপহার দিলেন ‘জেল থেকে বলছি’, ‘নগর বাউল’, ‘লেইস ফিতা লেইস’, ‘কালেকশন অব ফিলিংস’ অ্যালবামগুলো। পরবর্তীতে ‘ফিলিংস’ ভেঙে নতুন ব্যান্ড ‘নগর বাউল’ গঠন করেন তিনি। সেই থেকে তিনিও শ্রোতাদের কাছে ‘নগর বাউল’ নামেই পরিচিত। এই ব্যান্ড থেকে ‘দুষ্টু ছেলের দল’ ও ‘বিজলি’ অ্যালবাম দুটি উপহার দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া জেমসের একক অ্যালবাম হিসেবে রয়েছে ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘ঠিক আছে বন্ধু’, ‘আমি তোমাদেরই লোক’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘তুফান’ ও ‘কাল যমুনাজেমসের কণ্ঠে জনপ্রিয়তার আকাশ ছোঁয়া গানগুলোর মধ্যে ‘দুঃখিনী দুঃখ করো না’, ‘কবিতা’, ‘পাগলা হাওয়ার তরে’, ‘গুরু ঘর বানাইলা কী দিয়া’, ‘বাবা কত দিন দেখি না তোমায়’, ‘মা’, ‘কাল যমুনা’, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’, ‘মীরাবাঈ’, ‘আসবার কালে আসলাম একা’, ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, ‘আমার সোনার বাংলা’, ‘এক নদী যমুনা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।