সাগর আহম্মেদ,কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:বাবা গ্রুপ, ০০৭ গ্রুপ, জাউরা গ্রুপ, ভোল্টেজ গ্রুপ,ডি কোম্পানি ও জাহাঙ্গীর গ্রুপসহ বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং গ্রুপ। প্রতি গ্রুপে আনুমানিক ১০/১৬ জন করে কিশোর। টাকার বিনিময়ে মারামারি, দখলবাজি, পিকেটিং, ছিনতাই, ডাকাতি, খুনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে থাকে। তাদের ক্ষমতার জাহিরে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে মানুষ।গত বৃহস্পতিবার মাত্র ৩ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ৩৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। এলাকাবাসী ও র্যাব-১ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। তাদের নামে বেনামে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন গ্রুপ। বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং, গ্যাং কালচার, উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে।
গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোট খাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে হাতাহাতি- মারামারি করে। এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সাথে প্রায়সই কোন্দলে লিপ্ত থাকে। তাদের এই ধরনের চলাফেরার কারণে সাধারণ লোকজন তাদের অনেকটাই এড়িয়ে চলে। এই এড়ানোর বিষয়টিকে তারা তাদের ক্ষমতা হিসেবে ভাবে এবং কোন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। সস্প্রতি র্যাব-১ এর গোয়েন্দা অনুসন্ধানে রাজধানীর মহাখালী, বিমানবন্দর, বনানী, গাজীপুর ও
টঙ্গী থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় কতিপয় কিশোর গ্যাংয়ের কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা গড়ে তুলেছে বাবা গ্রুপ, ০০৭ গ্রুপ, জাউরা গ্রুপ, ভোল্টেজ গ্রুপ, ডি কোম্পানি ও জাহাঙ্গীর গ্রুপসহ নামে বেনামে বিভিন্ন গ্রুপ। প্রত্যেক গ্রুপের আনুমানিক সদস্য ১০/১৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের নামে পেশীশক্তি প্রদর্শন করে আসছে। মাদক সেবন, সাইলেন্সারবিহীন মোটরসাইকেল চালিয়ে বিকট শব্দ করে জনমনে ভীতির সঞ্চার, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত কিশোর গ্যাং। তারা টাকার বিনিময়ে যে কোন পক্ষের হয়ে মারামারি, দখলবাজি, পিকেটিং করে। যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিশ্চিত ক্ষতির মুখে ধাবিত করছে। এরই প্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং এর বিপথগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে সস্প্রতি র্যাব-১ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার রাত ৭টার থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-১। মাত্র ৩ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে রাজধানী ঢাকার মহাখালী, বনানী, বিমানবন্দর, টঙ্গি ও গাজীপুর এলাকা থেকে ‘০০৭ গ্রুপের দলনেতা আল-আমিন, জাউরা গ্রুপের দলনেতা মাহাবুব, বাবা গ্রুপের দলনেতা সাদ, ভোল্টেজ গ্রুপের মনা, ডি কোম্পানি- (লন্ডন পাপ্পু চালায়) আকাশ ও আমির হোসেন গ্রুপ’ জাহাঙ্গীর গ্রুপ ওরফে বয়রা জাহাঙ্গীর গ্রুপসহ বিভিন্ন কিশোর গ্যাং গ্রুপের ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাসেল, আরাফাত, রবিন, আল-আমিন, ইসলাম, জুয়েল, রবিউল, মুরাদ, মাহাবুব, সাদ, রোহান, মনা, হৃদয়, ওবায়েদ, জিসান, আকাশ, ঈমন, রমজান, সজিব, শাকিব, রাজিব, আমির হোসেন, শাহজাহান সাজু @ রাসেল, জিলাদ মিয়া, হৃদয়, রায়হান, বাবু মিয়া, শাহজাহান, জালাল মিয়া,লামিম মিয়া, রাকিব, হিরা মিয়া, ইমরুল হাসান, সাকিন সরকার রাব্বি, সুজন মিয়া, খাইরুল, রাহাত। এসময় তাদের কাছ থেকে ৫০০ গ্রাম গাজা, ২৪টি মোবাইল, ১টি ব্লেড, ১টি কুড়াল, ১টি পাওয়ার ব্যাংক, ৫টি রড, ১৬টি চাকু, ৩টি লোহার চেইন, ১টি হাতুড়ী, ১টি মোটরসাইকেল এবং ২৪ হাজার ২৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক, অস্ত্র, ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পরিচালক (মিডিয়া অফিসার) মোঃ মাহফুজুর রহমানের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, টাকার বিনিময়ে যে কোন পক্ষের হয়ে মারামারি, দখলবাজি, পিকেটিং, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে। কিশোর গ্যাং এর বিপদগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ এর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।