সাগর আহম্মেদ, কালিয়াকৈর:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের ১৭ কোটি মানুষের দেশ। কাজেই এই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা, আর্থসামাজিক উন্নতি করা এবং তাদের নিরাপত্তা বিধান করা এটাই আমাদের কাজ। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক এর হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সব সময় অব্যাহত থাকবে। কাজেই সেদিকে লক্ষ রেখেই আমাদের আনসার বাহিনীর ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করে যাবেন। তিনি সোমবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৪তম জাতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সম্মৃদ্ধ খুধা দারিদ্র মুক্ত স্মার্ট সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবের স্বপ্ন আমরা পুরণ করবো। সেই সাথে সাথে ডেটা প্লান্ট ২ হাজার ১০০ তৈরি করে দিয়েছি। জলবায়ু অধিকার থেকে এই বদ্বীপ যাতে রক্ষা পায় প্রতি অঞ্চল অথ্যাৎ গ্রাম পর্যায় মানুষ যেন সুরক্ষিত থাকে, উন্নত জীবন পায় এবং প্রত্যেকে যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে আমাদের তরুণ সমাজ তারাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক স্মার্ট সৈনিক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। আজকে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছি। সবচেয়ে বড় কথা হলো সাধারন মানুষের মধ্যে একটা আত্ববিশ^াস গড়ে উঠেছে। যেটা আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল। আত্ব বিশ^াস ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। আর সেটা আমরা আজকে করতে পেরেছি। যেকোনো অবস্থার মোকাবেলা করার মতো আমাদের সেই সক্ষমতা আছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নিরাপদ করতে চাই। আমাদের গ্রামগুলোও স্মার্ট গ্রাম হিসেবে গড়ে উঠবে। সেখানে কোনো মানুষ দারিদ্র থাকবে না, কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। আমি ইতিমধ্যেই ভূমিহীন-গৃহনীন মানুষকে ঘর করে দিয়েছি। আমরা সেভাবে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনযাপন উদযাপন এবং সুন্দরভাবে এগিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতীয় যেকোনো প্রয়োজনে আনসার বাহিনীকে আহবান করা হয় এবং তারা দায়িত্ব পালন করে। এখন বিভিন্ন দূতাবাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ বাহিনী অত্যান্ত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, যখন সেই ২০১৩ সাল, ২০১৪ সাল ও ২০২৩ সালেও অগ্নিসংস্ত্রাস, রেলে আগুন, রেললাইন কেটে ফেলে দেওয়া, মানুষকে হত্যা করাসহ বিএনপি জামায়াত জোট যে ধংবসাংক্তক কাজ করেছিল। সেখান থেকেও এ বাহিনী অত্যান্ত দক্ষতার সাথে রক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছি। ১৯৭১ সালে ২৬শে মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। তারপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর মজিবনগরে স্বাধীন গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে মূখ্য রাষ্ট্রপতি ও তাজউদ্দিন আহমদ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় আজকের যেটা মেহেরপুর সেখানে এই সরকার প্রথম শপথ গ্রহণ করে। আনসার বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জাতির পিতার ডাকে সারা দিয়ে হাজার হাজার আনসার বাহিনী তাদের হাতে যা কিছু ছিল সব নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, প্রায় ৬১ লক্ষ সদস্য বিশিষ্ট আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহনীতে দুটি মহিলা ব্যাটালিয়ন একটি বিশেয়িত আনসার গ্রাম ব্যাটালিয়ন ৪২টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এখানে ১৬টি ব্যাটালিয়ন সদস্যরা পার্বতী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা উত্তরণে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় কত কষ্ট পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন অথবা শহীদ হয়েছেন। আমি তাদের কথাও স্বরণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ১৯৯৬ সাল থেকে সরকারে এসেছি তখন থেকে আনসার বাহিনীর উন্নয়নের বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছি। আজকে এ বাহিনী শুধু দেশে নয় বিদেশে সব জায়গায় সুনাম অর্জন করে যাচ্ছে। এ বাহিনী গ্রাম পর্যায়েও কাজ করে থাকেন। আমরা গ্রাম উন্নয়নেও বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিয়েছি। আমার গ্রাম আমার শহর, আমার বাড়ি আমার খামারসহ বিভিন্ন কর্মসূচী প্রতিটি ক্ষেত্রে আনসার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রলাপ পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তাছাড়া দুর্যোগ ও বিপাকে আনসার বাহিনী নেমে আসে এবং সহযোগিতা করে। কখনো ঝড়, বন্যা, ঘুর্ণিঝড়সহ যেকোনো দুর্যোগ প্রবল ঘটনা ঘটলে এ বাহিনী অত্যান্ত আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যান।
আনসার বাহিনীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যে আমরা পুরাতন আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন করেছি। আনসার ব্যাটালিয়ন আইন ২০২৩ ইতিমধ্যে আমরা পাশ করে দিয়েছি। এতে করে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের মতো প্রথম দিন থেকেই স্থায়ী হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। এর পূর্বে আনসারদের স্থায়ী হতো না। আমি ১৯৯৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমভাবে এই স্থায়ী হওয়ার কাজ শুরু করি। এখন নতুন আইনে সেই সুবিধা করে দিয়েছি। উপজেলা আনসার কোম্পানী কমান্ডার, ইউনিয়ন প্লাটো কমান্ডার, ইউনিয়ন দলনেতা, ইউনিয়ন দলনেত্রীদের আইডি কার্ড প্রদান এবং বার্ষিক সম্মানী ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া আনসার সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি ও রেশম সামগ্রী উপকরণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নারী বিজিবি সদস্যদের মতো অত্যান্ত আধুনিক ডিজাইনের নতুন শাড়িও আমি প্রবর্তন করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে আমরা বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর সরকার গঠন করি। দেশ পরিচালনা করে আজকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। তবে আমাদের আরো আন্তরিকতার সাথে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। আমরা চাই আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনী বিশেষ করে আনসার বাহিনীও সে স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে। দেশের উন্নয়নের সাথে একাত্ব হয়ে কাজ করে যাবে।
তিনি আনসার ভিডিপি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আপনাদের বলবো আপনাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন। সকলকে কঠোর ভাবে পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। জন নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে যেকোনো অশুভ তৎপরতা তা মোকাবেলা করতে হবে। সততা ও আন্তরিকতার সাথে আপনারা সেটা রুখে দাঁড়াবেন। জনগণ এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা, শান্তি পরিবেশ ধরে রাখা এটা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পূর্ব শর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা। কাজেই সেই পরিবেশ ধরে রাখার জন্য সকলকে আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আলহাজ¦ এ্যাড. আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সিনিয়র সচিব, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বিপিএএ, বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, পিএইচডি, অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাজিম উদ্দিন, আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট মোঃ নূরুল হাসান ফরিদী, বাহিনীর উপমহাপরিচালকবৃন্দ, অন্যান্য কর্মকর্তা ও আনসার- ভিডিপি সদস্যবৃন্দ। এছাড়াও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, তিন বাহিনী প্রধান, সিনিয়র সচিববৃন্দসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সামরিক ও বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গ এবং আমন্ত্রিত অতিথি বৃন্দ।