মেহেরপুর প্রতিনিধি:মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। আর এতে প্রতিদিন গড়ে ৫০হাজার মন জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে । ছড়াচ্ছে বিভিন্ন রোগবালাই । এতে পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাদী জমি, উজাড় হচ্ছে গাছ পালা, ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি।
জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোন অভিযানও চোখে পড়েনি। ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার দাপট ছাড়াও বিশেষ ব্যবস্থায় এসব ইটভাটা চলছে বলে মন্তব্য সচেতন মহলের। তবে প্রশাসন বলছে,অভিযান চালানো হবে। প্রাপ্ত তথ্যমতে জেলায় মোট ৮০টি ইটভাটা রয়েছে। যার একটিরও কোন অনুমোদন নেই। প্রভাবশালী রাজনীতিকরা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ক্ষমতার জোরে ইটভাটা তৈরী করছে। সচেতন মহলের অভিযোগ, যেখানে সেখানে ইটভাটা তৈরী হওয়ায় আবাদী জমিগুলো নষ্ট হচ্ছে। একটি ইটভাটা তৈরী করতে কমপক্ষে ৭/৮ একর জমির প্রয়োজন হয়।
অনেক সময় মাটির প্রয়োজন হলে এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরের এক থেকে দেড়ফুট মাটি কেটে ইট তৈরী করে। এতে ফসলী জমির উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়। শুধু তাই নয়, ইটভাটার নির্গত কালো ধোয়ায় এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও আবাদি জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কোন ইটভাটায় অনুমতিপত্রের শর্তনুযায়ী কয়লা ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয় কাঠ। বিশেষ করে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ ছাড়াও বাঁশের মোথা ব্যবহারের ফলে বাঁশঝাড় উজাড় হচ্ছে।
ইটপোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ ও ২০০১ সনের ১৭ নং অনুচ্ছেদের ৪ ও ৫ ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, আবাদি জমিতে কোন ইটভাটা তৈরী করা যাবেনা। এছাড়াও কাঠ পোড়ানো যাবেনা। অথচ সকল ইটভাটায় কয়লার বদলে কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোকজন জরিমানা আদায় করলেও ইটভাটা বন্ধ করেনা। ফলে প্রভাবশালীরা প্রতি বছর নতুন নতুন ইটভাটা তৈরী করছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার রেজা জানান, ইটভাটায় নির্গত কালো ধোয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাপানি, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত কার্বণ-ডাই অক্সাইডের কারণে ফসল ও এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। অনতি বিলম্বে পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ জরুরী।
একটি সুত্র জানায়, এদিকে মাস দুয়েক আগে ইটভাটা চালু হলেও অদ্যাবদি প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার কোন অভিযান পরিচালনা করেন নি। প্রতি বছরই ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে মোট অংকের টাকা উত্তোলন করেন মালিক সমিতি। এ টাকা দিয়েই সব দপ্তরকে ম্যানেজ করতে হয়। এদিকে ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি এনামুল হক জানান, জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে কিন্তু অনুমোদন মেলেনি। সব জায়গাতে কথা বলে ম্যানেজ করেই ইটভাটা চালানো হয়। কাকে কিভাবে ম্যানেজ করেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। ক্রেতারা জানান, গেল বছর এক নম্বর ইটের দাম ছিল প্রতি হাজার ১৪ হাজার টাকা।
বর্তমানে দাম বেড়ে দাড়িয়েছে ১৮ হাজার টাকা। অভিযানের পরপরই দাম বেড়ে গেছে। আবার ইটের পরিমাপ সঠিক নয়। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর উদাসিন। কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আতাউর রহমান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সজল আহমেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান। অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা কাঠ পোড়ানোর ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, ইটভাটা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি দপ্তর জড়িত। সবাইকে নিয়ে সমন্বিতভাবে অভিযান চালানো হবে।