সাগর আহম্মেদ,কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে তিন বার গুড়িয়ে দেয়া তিনটি অবৈধ ইটভাটা পুনরায় চালু করার অভিযোগ উঠেছে। ক্ষমতার দাপটে ছোট চিমনী নির্মাণ করে পরিবেশ দুষণ করে পুড়ানো হচ্ছে ইট। আর নষ্ট হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল ও ফলমুল। তাহলে ওই অবৈধ ইটভাটা এভাবেই চলবে? এমন প্রশ্ন হতাশাগ্রস্থ কৃষকসহ স্থানীয়দের।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ফেব্রুয়ারী কালিয়াকৈর উপজেলার দরবাড়িয়া এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। ওই ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী। অভিযান চালিয়ে ভাটার আংশিক সাইট ওয়াল ভেঙ্গে জে.আর.বি ইটভাটা ৪ লক্ষ টাকা, এস.বি স্টারকে ৪ লক্ষ টাকা এবং ন্যাশনাল ব্রিকসকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। অদৃশ্য কারণে চিমনী না ভেঙ্গে বৈশম্যে জরিমানায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, সাবেক ওই ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে ৩/৪ দিন পরেই এসব ইটভাটা আবার চালু করে ইটভাটার মালিকরা। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে টনক নড়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ওই ইউএনও বদলি হলে অভিযানের ২৫ দিন গত ২৯ ফেব্রুয়ারী দুপুরে ওই তিনটি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অবশেষে চিনমনীসহ অবৈধ তিনটি ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় জে.আর.বি ইটভাটাকে দেড় লক্ষ টাকা, এস.বি স্টার ওরফে স্ট্রং বিকসকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া কাউকে না পাওয়ায় ন্যাশনাল ব্রিকসকে জরিমানা করা যায়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) কাজী তামজীদ আহমেদের নেতৃত্বে ওই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নয়ন মিয়া, সহকারী পরিচালক মইনুল হক ও মমিন ভুইয়া, পরিদর্শক সঞ্জিত বিশ^াসসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জেলা ও থানা পুলিশ। সে সময় চিমনীসহ ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়ায় সন্তোষ্ট প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু ওই অভিযানের কয়েকদিন পর নতুন করে আবারও তিনটি ইটভাটার ছোট আকৃতির চিমনী নির্মাণ করে মালিকরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে ক্ষমতার দাপটে পরিবেশ দুষণ করে দেদারছে পুড়ানো হচ্ছে ইট। আর ছোট চিমনীতে বেশি নষ্ট হচ্ছে ধানসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল ও ফলমুল। তাহলে ওই অবৈধ ইটভাটা এভাবেই চলবে? এমন প্রশ্ন হতাশাগ্রস্থ কৃষকসহ স্থানীয়দের।
অভিযানের পর কিভাবে ইটভাটা চালাচ্ছেন জানতে চাইলে এস.বি স্টার ওরফে স্ট্রং বিকসের মালিক নাসির উদ্দিন জানান, চিমনীটা ঠিক করে রাখছি। দেখি কি হয়? ইটভাটা তো ফেলে রাখা যাবে না। সবারটা ঠিক করছে, অন্য দুজন আবার আগুন দিয়ে চালু করেছে। আমি কথা বলে তারপর প্রসেসিং করবো। চিমনী নির্মাণের কথা স্বীকার করে ন্যাশনাল ব্রিকসের মালিক নুরুল ইসলাম জানান, আমি খুব ক্ষতিগ্রস্থ। যে মাল বানাইছি, সেগুলো তো পুড়াতে হবে। তারপর যদি না হয় তাহলে তো আর করবো না, ভাই। জে.আর.বি ইটভাটার মালিক সোহেল রানা জানান, গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মইনুল হক জানান, নতুন করে ওই ইটভাটাগুলো চালু হয়েছে কিনা? তা আমার জানা নেই। তবে যদি এরকম হয়, তাহলে আমরা আবার ভেঙ্গে দিবো।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (সিনিয়র সহকারী সচিব) কাজী তামজীদ আহমেদ জানান, বিষয়টি গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর ও কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাবেন। উনারা যদি জানায় আর কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন তাহলে আমি আবার অভিযান চালাবো। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর এসে ভেঙ্গে দিয়েছে, তাহলে উনাদেরই বিষয়টি দেখা উচিত ছিল। তারপরেও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।