
ঢাকা-বরিশাল নৌপথে প্রায় ছয় বছর ধরে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছিল দ্রুতগতির অত্যাধুনিক নৌযান এমভি গ্রীন লাইন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই নৌযানটি লঞ্চের চেয়ে কম সময়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতো। যাতায়াতে ঝুঁকি কম, স্বাচ্ছন্দ্য ও ভ্রমণ আরামদায়ক হওয়ায় এমভি গ্রীন লাইন নামের নৌযানটি যাত্রীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তবে পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট।
সড়কপথে যাত্রীর চাপ বাড়ায় নৌযানটিতে কমতে শুরু করে যাত্রী। সম্প্রতি যাত্রী সংকটের কারণে জ্বালানি বাবদ ব্যয় উঠে আসছে না বলে নৌযানটির মালিক পক্ষ দাবি করেছে। ফলে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে নৌযানটির যাত্রীসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিন সকাল ৮টায় ঢাকার সদরঘাট থেকে এবং বিকেল ৩টায় বরিশাল প্রান্ত থেকে যাত্রী পরিবহন করে আসছিল এমভি গ্রীন লাইন। তবে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) ঢাকার সদরঘাট থেকে এবং বরিশাল প্রান্ত থেকে নৌযানটি ছাড়েনি।
এমভি গ্রীন লাইন নৌযানের ঢাকা সদরঘাটের ইনচার্জ জিয়াউল হাসান ভুট্টু জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ক্রমান্বয়ে কমছে নৌযানটির যাত্রী। তবে মাঝে ঈদে কয়েকদিন যাত্রী হয়েছিল। এরপর আবার যাত্রী কমতে শুরু করে। গত এক সপ্তাহে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় গড়ে ৬০-৭০ শতাংশ যাত্রী কমছিল। এরমধ্যে সোমবার (২৫ জুলাই) আরও খারাপ অবস্থা গেছে।
জিয়াউল হাসান ভুট্টু আরও জানান, নৌযানটির আসন সংখ্যা ৬০০। সোমবার সকালে সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে যখন ছেড়ে গেছে, তখন ৪৮৯টি আসন খালি ছিল। একই দিন দুপুরে বরিশাল থেকে সদরঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে নৌযানটি। এরপর ঢাকায় আসার পর বিক্রিত টিকিট হিসাব করে দেখা যায় যাত্রী ছিল মাত্র ৯৫ জন। অর্থাৎ ৬০০ আসনের মধ্যে ৫০৫টিই খালি ছিল।
নৌযানটি দ্রুতগতির হওয়ায় প্রচুর জ্বালানির খরচ হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল আপ-ডাউনে জ্বালানি বাবদ খরচ হয় চার লক্ষাধিক টাকা। গত কয়েকদিনে যেভাবে যাত্রী কমছে, তা মালিক পক্ষের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
গ্রীন লাইন নৌযান সার্ভিসের বরিশালের ব্যবস্থাপক মো. হাসান সরদার বাদশা জানান, পদ্মা সেতু চালুর কারণে নৌপথে যাত্রীর আগ্রহ কমছে। ফলে নৌযানটিতে যাত্রী সংকট দেখা দেয়। কয়েকদিন ধরে ধারণার চেয়ে কম যাত্রী যাতায়াত করেছে। এ কারণে মালিক পক্ষের নির্দেশে দিনের বেলায় ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকরা গ্রীন লাইন নৌযানটির যাত্রীসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গ্রীন লাইন ওয়াটার ওয়েজের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘বেশকিছু দিন ধরে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও যাত্রীসেবা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। প্রতিদিনই লক্ষাধিক টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছিল। এ অবস্থায় আপাতত বরিশাল-ঢাকা নৌপথে এমভি গ্রীন লাইন নৌযানে যাত্রীসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।’
তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে আবার যাত্রীসেবা চালু করা হবে বলে জানান তিনি। বর্তমানে ঢাকা-কালীগঞ্জ-ইলিশা রুটে এমভি গ্রীন লাইনের অপর নৌযানটি নিয়মিত চলাচল করছে।
২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চালু করা হয়েছিল এমভি গ্রীন লাইন নৌযানের যাত্রীসেবা।