
খবর প্রতিদিন ২৪ডেস্ক :শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। চলতি বছরের জুনে শিখ নেতা হত্যাকাণ্ডে ভারত জড়িত, এমন অভিযোগ এনে সে দেশের এক কূটনীতিককে সোমবার বহিষ্কার করেছে কানাডা। পাল্টা ভারতও বহিষ্কার করেছে দিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার এক কূটনীতিককে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তাকে ভারত ছাড়ার জন্য পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে ট্রুডো অভিযোগ করেন, হরদীপ সিংকে খুনের পেছনে ভারতের হাত থাকার নির্দিষ্ট প্রমাণ তার সরকারের কাছে রয়েছে। তাদের কাছে সেই প্রমাণ যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যও। ট্রুডো বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে কানাডার এক নাগরিককে এভাবে হত্যা করা, বিদেশিদের এমন প্রত্যক্ষ যোগসাজশ কানাডার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে।
ওই অভিযোগের পরই কানাডায় অবস্থানরত এক ভারতীয় কূটনীতিককে বহিষ্কারের কথা জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি। তবে কোন কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কানাডা তা জানায়নি। তবে মেলানিয়া জোলি এটুকু বলেন, যাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং’-এর (র) প্রধান ছিলেন।
অন্যদিকে কানাডার সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কানাডার প্রধানমন্ত্রী সে দেশের পার্লামেন্টে যা বলেছেন, তা ‘অবাস্তব ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। শুধু প্রতিবাদই নয়, ভারতে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার ক্যামেরুন ম্যাককে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ শুধু অসত্যই নয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর। সে দেশের এক শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথাও হাইকমিশনারকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
পরে ভারতের মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কানাডার কূটনীতিকের অযথা হস্তক্ষেপ উদ্বেগজনক। তাদের ভারত বিরোধিতা বরদাশত করা যায় না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশে আইনের শাসন আছে। এই ধরনের অপ্রমাণিত অভিযোগের মূল লক্ষ্য খালিস্তানি চরমপন্থী ও সন্ত্রাসবাদীদের দিক থেকে চোখ ফেরানো। এই জঙ্গিদের কানাডা আশ্রয় দিয়েছে। তারা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। অথচ কানাডা সরকার নিষ্ক্রিয়। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের।
হরদীপ সিং নিজ্জর কানাডায় বসবাসকারী শিখ নেতা। গত জুনে তিনি ভ্যাঙ্কুভারে এক গুরুদ্বারের কাছে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তিনি ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধর থেকে সে দেশে গিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে। ভারতের অভিযোগ, হরদীপ সিং ছিলেন সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘খালিস্তানি টাইগার ফোর্স’ ও ভারতে নিষিদ্ধ ‘শিখস ফর জাস্টিস’-এর কানাডা শাখার নেতা। ভারতের চোখে তিনি অপরাধী ও ‘ফেরার’। তাকে দেশে ফেরত আনতে আগ্রহী ছিল ভারত।
হরদীপ সিং বরাবর স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। ভারতের অভিযোগ, সেই লক্ষ্যে তিনি ভারতে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবাদী হামলাও চালিয়েছেন। যদিও হরদীপ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।