নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রস্তাবিত বাজেটের পর শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। আগের কার্যদিবসের মতো সোমবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেটের পর লেনদেন হওয়া দুই কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।
প্রস্তাবিত বাজাটের পর শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দিলেও বাজেটকে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক বলছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়াসহ আরও কয়েকটি দাবি পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন তরা।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের বাজেটে করপোরেট করে বড় ছাড় দেওয়া হলেও পুঁজিবাজারে বিনাপ্রশ্নে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এরপর শনিবার (১১ জুন) সংবাদ সম্মেলন করে বিনাপ্রশ্নে পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
এ বিষয়ে সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতাদের জন্য ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা রহিত করা হয়েছে। এই সুবিধা আগামী বছর পর্যন্ত বহাল রাখার জন্য আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এতে বাজার যেমন শক্তিশালী হবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে, পাশাপাশি অর্থপাচারও কমবে।
প্রস্তাবিত বাজাটের পর প্রথম কার্যদিবস রোববার (১২ জুন) শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়। এ পরিস্থিতিতে সোমবার (১৩ জুন) দুপুরে বাজেট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএসই। ডিএসই কার্যালয়ে যখন সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়, ততক্ষণে সূচকের বড় পতন প্রবণতা দেখা যায়।
একদিনে করপোরেট কর হারে ছাড় দেওয়া, অন্যদিকে বিনাপ্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা এবং প্রস্তাবিত বাজাটের পর শেয়ারবাজারে দরপতন হওয়া নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারেক আমিন ভূঁইয়া বলেন, বিভিন্ন কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজাটের পর শেয়ারবাজারে যে দরপতন হচ্ছে, তা বাজাটের জন্য এটা এখনই বালা যাবে না। যদি দুই-তিন মাস বাজার পতনের মধ্যে থাকে তখন আমরা বলতে পারবে এটা বাজেটের জন্য হচ্ছে।
করপোরেট করহার কমানোকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে ডিএসই’র চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের অধিক শেয়ার আইপিও’র মাধ্যমে হস্তান্তরিত হলে সেই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দেশের বৃহৎ এবং স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। এসময় তিনি তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে করহারের ব্যবধান কমপক্ষে ১০ শতাংশ করার দাবি জানান।
ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন, করপোরেট করহার কমানোর কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মুনাফা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীরা ভালো লভ্যাংশ পাবেন। পাশাপাশি কোম্পানির ইপি রেশিও কমে আসতে পারে। এটা অবশ্যই শেয়ারবাজারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমতে দেখা যায়। লেনদেনের সময় গাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে এ প্রবণতা। ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৫৩টির এবং ৪২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৯১ পয়েন্টে নেমে গেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৩১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও বাজারটিতে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ১৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্সের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা শাহিনপুকুর সিরামিকের ২৮ কোটি ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এসিআই ফরমুলেশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং, বেক্সিমকো, বিডিকম অনলাইন, স্যালভো কেমিক্যাল, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ এবং নাহি অ্যালুমেনিয়াম।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১০১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৪২ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ২৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৯০টির এবং ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।