মোহাম্মাদ হেদায়েতুল্লাহ্ ,নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি:স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছরেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সাথে নবীনগর উপজেলার কোন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। উপজেলা থেকে রাজধানী বা অন্য কোনো শহরে যেতে হলে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলা অথবা পার্শ্ববর্তী বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ঘুরে নারায়ণগঞ্জে ভূলতা-ধনবাড়িয়া হয়ে অতিরিক্ত ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে স্থানীয়দের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার বাসির দীর্ঘদিনের দাবী’র প্রেক্ষিতে সাবেক সাংসদ ফয়জুর রহমান বাদল সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য থাকার সুবাদে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে বিশেষ বিবেচনায় মেগা প্রোজেক্টের আওতায় নবীনগর টু আশুগঞ্জ সড়ক নির্মাণে দুটি ব্রিজ সহ ২০১৮ সালে "একনেক" এর শেষ সভায় চারশত একুইশ কোটি টাকা ব্যায়ে এই মেগা প্রজেক্ট অনুমোদন করান।
বর্তমানে এই প্রকল্পের বাজেট বৃদ্ধি হয়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার দাঁড়াবে বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের অফিস সূত্র জানায়।
এই মেগা প্রজেক্ট এর আওতায় একটি সেতু তিতাস নদীর উপর মনতলা-সীতারামপুর সেতু নির্মানের কাজ শেষ হলেও গত এক বছরে চালু হয়নি সেতুটি। ওই মেগা প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৭০ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তিতাস নদীর উপর মনতলা - সীতারামপুর ঘাট থেকে নবীনগর সদরে সংযোগের জন্য ৫৫৮ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স ও হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ পায়।
২০২১ সালে জানুয়ারি মাসে তাঁরা কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্মান কাজের সময় বাড়ানোর পর সেতৃ নির্মান কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় ১ বছর পেরিয়ে গেলেও সেতুটি চালু হয়নি। ফলে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে দিনে ও রাতে খেয়া পাড়ি দিতে হয়।
জানা যায়,ব্রীজের দুই পাশে সরকারের অধিগ্রহণকৃত জায়গায় স্থানীয়দের বাড়ি ঘর থাকায় দু’পাশে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা যাচ্ছে না। ভূমি মালিকগণ অধিগ্রহণের টাকা না পেলে জমি ছাড়বেন, না তাই দীর্ঘদিন ধরে এপ্রোচ সড়কের কাজ বন্ধ ছিল। জনসাধারনের দুর্ভোগ বিবেচনায় অবশেষে স্থানীয় এমপি এবাদুল করিম বুলবুল জমি অধিগ্রহনের সরকারি বরাদ্ধের টাকা দ্রুত ছাড় করিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের কাছে চেক বিতরণ করেন। গত শুক্রবার ভূমি অধিগ্রহণকৃত ১২টি চেকের মাধ্যমে, ভূমি মালিকের হাতে ক্ষতিপূরণের ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৮ হাজার নয়শত ৬৬ টাকার চেক তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের হাতে তুলে দেওয়া দেন। অধিগ্রহণকৃত ভূমি মালিকরা হচ্ছেন,মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী, ইয়াসিন মিয়া, জয়নালউদ্দিন,হাসান মিয়া, মকবুল হোসেন, আক্কাস আলী, মোজাম্মেল মিয়া, মাইনুদ্দিন, ওসমান গনি, আব্দুল মোতালিব, রিপন মিয়া, রাবিয়া খাতুন।
চেক হস্তান্তরের সময়,উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামূল ছিদ্দিক, উপজেলা সহাকরি কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা জাহান, জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ নাসির উদ্দিন,ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সাদেক ও স্থানীয় সুধিজনরা উপস্থিত ছিলেন।
এবাদুল করিম বুলবুল এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলেই দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক সরকার ব্যবস্থার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু চালু হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগের নিবার্হী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত দু’পাশে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করে খুলে দেওয়া হবে। তিতাস নদীতে এই সেতুর চালু হলে স্বাধীনতার ৫২ বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো ২১ কিলোমিটার দূরত্বের নবীনগর উপজেলা সদরের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।
-খবর প্রতিদিন/ সি.ব