মাগুরা থেকে সাইদুর রহমান: মাগুরায় সপ্তাহব্যাপী তীব্র তাপদাহ,অনাবৃষ্টি থাকার কারণে সদরের বিভিন্ন মাঠের বোরো ধান,আটাশ ও উনত্রিশ ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে । প্রচন্ড তাপদাহের ফলে বোরো ধানের এ ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় জেলার কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন । এখন মাঠের প্রতিটি ধানের গোছায় ধানের ছড়া বের হয়েছে । আর কিছু দিন পর কাটা হবে ধান ধান । কিন্তু হঠাৎ করে ধানে এ ব্লাস্ট দেখা দেওয়ায় ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ধানের প্রথমে হলুদ ভাব হয়ে পরে চিটায় পরিণত হচ্ছে । বিশেষ করে মাগুরা সদর উপজেলার
আলাইপুর, মিঠাপুর, মির্জাপুর, শত্রুজিতপুর, বালিয়াডাঙ্গা, বারাশিয়া গ্রামে সরজমিন ঘুরে দেখা গিয়েছে অধিকাংশ বোরো ধানের ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে । ধানে ব্লাস্ট রোগ দেওয়াতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা কম হবে বলে আশা করছেন কৃষকরা । মাগুরা কৃষি বিভাগ তেকে জানান হয়,মাটি যদি বেলে প্রকৃতির ও শুকনো হয়,জমিতে ইউরিয়া সার বেশি ও পটাশ সার কম ব্যবহার হলে ও রাতে ঠান্ডা ,দিনে বেশি গরম হলে এ রোগ দেখা দিতে পারে । এ রোজ
প্রতিরোধে জমিতে জৈব সার প্রকারভেদে বিঘাপ্রতি ৫শ’-৮শ” এবং রাসায়নিক সার সুষম মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে । তাছাড়া ধানের পাতায় ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে জমিতে তাৎক্ষণিক সেচ দিতে হবে,আক্রান্ত জমিতে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি এমওপি বা পটাশ সার দিতে হবে । আক্রান্ত বেশি হলে নি¤েœাক্ত বালাইনাশকের যে কোন একটি ৮-১০ দিও পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে ।
মাগুরা সদরের আলাইপুর গ্রামের কৃষক তোজাম্মেল বলেন, সে ২ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছে । ধান রোপনের সাথে সাথে জমির পরিচর্যা বৃদ্ধি, জমিতে উপযুক্ত সার ও সেচ প্রদান করা হয । ধানের গোছা আসার সাথে সাথে জমির আরো পরিচর্যা বৃদ্ধি করার পর পুরো সপ্তাহ খানেক ধরে তীব্র তাপদাহ আর অনাবৃষ্টির কারণে হঠাৎ ধানের গোছায় হলুদ রং হতে দেখা যায় । তার ২ বিঘার প্রায় ১ বিঘা জমির ধান এখন ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত । অনেক বার ঔষধ ও স্প্রে করেও কিš‘ কোন কাজ হয়নি । ধান চিটা হয়ে
গেছে । যেখানে প্রতি বছর ২ বিঘা জমিতে ৫০-৬০ মণ ধান ফলেছে এবার সেখানে পাওয়া যাবে মাত্র ৩০ মণ । এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে কাঙ্খিত ধানের উৎপাদন না পাওয়ায় হতাশা ব্যাক্ত করেন। মাগুরা সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের কৃষক রিপন সরদার জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন । ধানের উপর তার সারা বছর চলে । এবার অতিরিক্তি তাপদাহের ফলে তার ২ বিঘা জমির ধান ব্লাস্ট
রোগে আক্রান্ত হয়েছে । সে এ ধান নিয়ে বিপাকে রয়েছে বলে জানান । অধিকাংশ ধানে চিটা হয়েছে বলে তিনি জানান। ধান কাটার শেষের দিকে এমন অবস্থায় তারা হতাশ বলে জানান। একই উপজেলার ছয়চার গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন,তীব্রতাপদাহে তার ৩ বিঘা জমির প্রায় ১ বিঘা বোরো ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে । ধান রোপনের সাথে সাথে সার ও সেচ নিয়মিত দেয়া হয় । প্রতিটি ধান গাছের গোছায় যখন ধান ছড়া আসতে শুরু করলো তখন পরিচর্যা বৃদ্ধি করা হয় । কয়েকদিন দিনের তীব্র তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে ধান হলুদ হয়ে চিটা হয়ে যা”েছ তখন বেশি শঙ্কিত হয়ে পড়ি । কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও স্প্রে করেও কোন কাজ হয়নি ফলে ধান নিয়ে শঙ্কিত আছি ।
মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো: রফিকুজ্জামান জানান,সপ্তাহখানেক ধরে মাগুরাসহ সারাদেশে তীব্র তাপদাহের ফলে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি দেখা দিয়েছে । তার পাশাপাশি কিছু এলাকায় ধানের ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বোরোসহ অন্যান্য ধান । এ সময় কৃষকদের শঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি জমিতে সব সময় পানি জমিয়ে রাখার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে । চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ৩৮ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে । এ মধ্যে সদরে ১৬ হাজার ৬৮০ হেক্টর,শ্রীপুরে ১৫শ’ ৯০ হেক্টর,শালিখায় ১৩ হাজার ৪৫ হেক্টর ও মহম্মদপুর
উপজেলায় ৬ হাজার ৮২৪ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে । এবার চাষের লক্ষ্যমাত্রো নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮শ’ হেক্টর । লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৬৩৯ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো চাষ হয়েছে । এবার হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্স্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪.৪৪ মেট্রিকটন চাউল । মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ্যমাত্রা ১লক্ষ ৬৩ হাজার ৪৮০ মেট্রিকটন চাউল । এবার ব্রী ধান-৮১,৮৯,২৯০৪.৬৭১১,৩৮০৫ এবং হাইব্রীড এসএল,এইট-এইচ,সিনজেনটা-১২০৩ জাতের ধানের চাষ জেলায় বেশি হয়েছে । এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা চেয়েও বেশি উৎপাদন হবে ।