মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া-সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্ত দিয়ে প্রতিরাতে সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ভারত থেকে কয়েক হাজার মেঃটন কয়লা ও চুনাপাথরসহ গরু, ছাগল, ঘোড়া, কসমেটিকস, নাসির উদ্দিন বিড়ি, মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও মোটর সাইকেলসহ অস্ত্র পাচাঁর করা হয় বলে খবর পাওয়া গেছে।
এব্যাপারে শুল্কস্টেশনের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- গতকাল সোমবার (১ জানুয়ারী) রাত ১২টা থেকে আজ মঙ্গলবার (২ জানুয়ারী) ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর উপজেলার চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য চারাগাঁও সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি,কলাগাঁও,এলসি পয়েন্ট,বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে প্রতিদিনে মতো অবৈধ ভাবে প্রায় ৫হাজার মেঃটন অবৈধ কয়লা ও বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত সোর্স পরিচয়ধারী রফ মিয়ার ডিপুসহ শুল্কস্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করেছে তোতলা বাহিনীর সদস্য একাধিক মামলার আসামী আইনাল মিয়া,সাইফুল মিয়া,রিপন
মিয়া,সোহেল মিয়া,আফজাল মিয়া,বাবুল মিয়া,আনোয়ার হোসেন বাবলু,শরাফত আলী ও শামসুল মিয়াগং। কিন্তু এব্যাপারে চারাগাঁও ক্যাম্পের কমান্ডার মোতালিব খানকে বারবার অবগত করার পরও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে পাশের বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের লামাকাটা ও সুন্দরবন এলাকা দিয়ে একাধিক মামলার আসামী লেংড়া জামালগং ৫শ টন কয়লা পাঁচার করে একই ভাবে চারাগাঁও ডিপুতে নিয়ে মজুত করেছে। এছাড়াও এই সীমান্তে রন্দুছড়া নদী দিয়ে কয়লা পাঁচার করে বাগলী শুল্কস্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করা হলেও এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একই সময়ে চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসেবে পরিচিত লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, সাহিদবাদ, পুরান লাউড় এলাকা দিয়ে শতাধিক গরুসহ বিপুল পরিমান নাসির উদ্দিন বিড়ি ও মদ, ইয়াবাসহ প্রায় ১হাজার মেঃটন কয়লা ও পাথর পাচাঁর করেছে সোর্স পরিচয়ধারী বায়েজিদ মিয়া ও জসিম মিয়াগং। অপরদিকে পাশের চাঁনপুর সীমান্তের বারেকটিলা,রাজাই,কড়ইগড়া ও নয়াছড়া এলাকা দিয়ে চোরাকারবারীরা অবাধে কয়লা, মাদক ও গরু পাচাঁর করেছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে সোর্স পরিচয়ধারী জঙ্গলবাড়ি গ্রামের লেংড়া জামাল বলেন- ১ ট্রলি (৫ মেঃটন) চোরাই কয়লা পাচাঁরের জন্য তোতলা আজাদের সোর্স আইনাল মিয়া ও রফ মিয়াকে বিজিবি নামে ৫ হাজার, পুলিশ ও সাংবাদিকের নামে ২হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য রাশিদ মিয়া ও কয়লা ব্যবসায়ী ফজলু সরদার বলেন- সীমান্ত এলাকা এখন তোতলা আজাদের নিয়ন্ত্রণে। সে তার বাহিনী নিয়ে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করে বর্তমানে সে কোটিপতি।
উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কফিল উদ্দিন বলেন- প্রতিরাতে সরকারের কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওপেন চোরাচালান হচ্ছে কিন্তু এসব দেখার কেউ নাই। আমি প্রতিবাদ করেছিলাম বলে চোরাকারবারীরা আমাকে প্রাণে মারার হুমকি দিয়েছে। লালঘাট গ্রামের চোরাই কয়লা ব্যবসায়ী খোকন মিয়া ও খায়রুল মিয়া বলেন- প্রায় ৩বছর যাবত তোতলা আজাদ তার বাহিনী নিয়ে ওপেন চোরাচালান করছে। সাংবাদিক,পুলিশ ও বিজিবির নামে প্রতিরাতে লাখলাখ টাকা তুলে তার বাড়িতে নিয়ে ভাগভাটোয়ারা করে। বড়ছড়া শুল্কস্টেশনের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের বলেন- রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিরাতে কোটিকোটি টাকার অবৈধ কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁরের কারণে আমরা ৩শুল্কস্টেশনের হাজারহাজার বৈধ ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছি কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতা না পাওয়ার কারণে আমরা অসহায়। তাই সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি বন্ধের জন্য প্রশাসনের উপরস্থ কর্মকর্তাদের সহযোগীতা জরুরী প্রয়োজন।
এব্যাপারে চারাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬১৩১২৬) নাম্বারে কল করলে কমান্ডার মোতালিব খান বলেন- আমি কি করব সেটা আমার ব্যাপার, আপনি আমার উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলুন, তারা আমার বিষয়ে সব জানে। বাঙ্গালভিটা ক্যাম্পে থাকা গোয়েন্দা সংস্থার (বিএসবি) সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন- কয়লা পাচাঁরের খবর পাওয়ার পর আমি ফোন করে চারাগাঁও ক্যাম্প কমান্ডারকে বারবার অবগত করার পরও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি,এব্যাপারে আমার উপরস্থ কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাব। পুলিশের নামে চাঁদাবাজির বিষয়ে তাহিরপুর থানার ওসি কাজী নাজিম উদ্দিন বলেন- সীমান্ত চোরাচালানের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। এছাড়া থানাপুলিশের কোন সোর্স নাই। সীমান্তের টেকেরঘাট ফাঁড়ি ক্যাম্পের ইনচার্জ সজীব দেবকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
তাছাড়া সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের দায়িত্ব বিজিবির। পুলিশের নামে যদি কেউ চাঁদা উত্তোলন করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমানের সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯- ৬০৩১৩০) নাম্বারের বারবার কল করার পরও কল করার পরও ফোন রিসিভ না করার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।