করোনা মহামারির কারণে রপ্তানিমুখী পোশাক ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকা শিল্পের কর্মহীন শ্রমিকের সহায়তায় সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছিল সরকার। এই কর্মসূচির অধীনে একজন শ্রমিক মাসে তিন হাজার টাকা করে সর্বোচ্চ তিন মাস পর্যন্ত অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকেন।
এজন্য ‘রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২০’ করেছিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
এখন এই নীতিমালা সংশোধন করে রপ্তানিমুখী সব শিল্পের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এনে সহায়তা করবে সরকার।
এজন্য সম্প্রতি ‘রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২০ (সংশোধিত ২০২২)’ জারি করেছে শ্রম মন্ত্রণালয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. মোখলেছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আগে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন, দুঃস্থ শ্রমিকদের সহায়তার জন্য নীতিমালা করা হয়েছিল। এখন এ নীতিমালার আওতায় রপ্তানিমুখী শিল্পের সব শ্রমিকরা আসবেন। এ নীতিমালার দায়িত্বে রয়েছে শ্রম অধিদপ্তর। আমরা নীতিমালাটি সংশোধন করে দিয়েছি।
শ্রম ও কর্মসংস্থান থেকে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পোশাক ও চামড়াশিল্পের কর্মহীন শ্রমিকদের সহায়তার জন্য একটি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগ শ্রম অধিদপ্তরের অনুকূলে এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করবে। কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি অর্থায়ন করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফেডারেল জার্মান সরকার।
নীতিমালায় বলা হয়, এ কার্যক্রমের আওতায় নির্বাচিত প্রত্যেক শ্রমিককে মাসিক তিন হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। সর্বোচ্চ তিন মাস এই সহায়তা পেতে পারেন একজন শ্রমিক। তবে, নির্বাচিত শ্রমিক এই তিন মাসের মধ্যে পুনরায় আগের কারখানায় বা অন্য কোথাও নিয়োগ পেলে এই সহায়তা পাবেন না।
রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের শ্রমিক যারা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোনো কারখানায় কর্মরত ছিলেন। যেসব শ্রমিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছেন এবং শারীরিক অসুস্থতার কারণে কাজে ফিরতে পারছেন না তারা এই সহায়তার যোগ্য বিবেচিত হবেন।
এছাড়া সন্তান জন্মদানকারী শ্রমিক যিনি শ্রম আইন অনুযায়ী আর্থিক সুবিধাদি পাওয়ার শর্তের আওতাভুক্ত না হওয়ায় প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা বঞ্চিত এবং পুনরায় চাকরিতে বহাল নন। কোভিড-১৯ অথবা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত এবং কাজ করতে অক্ষম শ্রমিক তারা পাবেন এই সহায়তা।
যেসব শ্রমিক সাময়িক চাকরি হারিয়েছেন এবং শ্রম আইন অনুযায়ী আইনানুগ ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শর্তের আওতাভুক্ত নন এবং যিনি এখনো কর্মহীন রয়েছেন। যিনি শ্রম আইন অনুযায়ী ছাঁটাইকৃত বা লে-অফকৃত এবং এখনও কর্মহীন রয়েছেন।
লে-অফকৃত শ্রমিক যারা বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী এক বা দুই মাসের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, কিন্তু এখনো কর্মহীন রয়েছেন এবং গত ৮ মার্চের পর স্থায়ীভাবে কারখানা বন্ধের ফলে চাকরি হারানো শ্রমিক এবং যিনি এখনো কর্মহীন রয়েছেন তারা এই সহায়তার আওতায় আসবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত দুঃস্থ শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বর ও মোবাইল নম্বরসহ বিস্তারিত তথ্য এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত এমআইএস-এ (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে) আপলোড করবে।
আপলোড করা তথ্যের সঠিকতা যাচাই করে তা এমআইএস-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনে পাঠানো হবে। পাশাপাশি শ্রম অধিদপ্তরের নির্বাচিত শ্রমিকদের তথ্য যাচাইয়ের সুবিধার্থে ফেব্রুয়ারি মাসের পে-রোলের কপি শ্রম অধিদপ্তরকে সরবরাহ করবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শিল্প সংগঠনগুলোর সদস্য কারখানাগুলো থেকে এমআইএস-এর মাধ্যমে পাওয়া তথ্য যাচাই করে সঠিক থাকলে এমআইএস-এর মাধ্যমেই পেমেন্টের জন্য শ্রম অধিদপ্তরে পাঠাবে। কারখানা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অসম্পূর্ণ বা অসঙ্গতিপূর্ণ হলে তা শ্রম অধিদপ্তরে না পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কারখানায় এমআইএস-এর মাধ্যমে ফেরত পাঠাবে। সহায়তার অর্থ পরিশোধের জন্য উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত অনুমোদন করবে শ্রম অধিদপ্তর।
এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য শ্রম শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে আট সদস্যের বাস্তবায়ন কমিটি থাকবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে। এজন্য একটি পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি থাকবে। ১০ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি হবেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব।