তারিখ: ০৯/০১/২০২৩
বরাবর
বার্তা সম্পাদক/বার্তাপ্রধান
মঙ্গলবার ৩১ জানুয়ারী ২০২৩ সকাল ৯:৩০ ঘটিকায় রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’এর আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে একটি সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধী এই প্রকল্পে জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগীতায় আছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যায়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস)।
উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা চৌধুরী নাজনীন, এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী এবং সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়ক ইঞ্জিঃ মোঃ নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী। এছাড়াও সভায় উপস্থিত সরকারী বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, ডাক্তার, বাসমালিক সমিতির সদস্য, সাংবাদিক, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা ।
স্বাগত বক্তবে স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শব্দ দূষণ সহ পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বেশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।
প্রধান অতিথি বক্ত্যবে রংপুর জেলার জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা চৌধুরী নাজনীন বলেন, সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৪১ সাল বাস্তবায়নে শব্দ দূষণ সহ অন্যান্য পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। রংপুর শহরে হাইড্রোলিক হর্ণ ও শব্দ দূষণের অনান্য উৎস চিহ্নিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সাহায্য করার জন্য পুলিশ প্রশাসন সহ সকল দপ্তরকে তিনি অনুরোধ করেন। তিনি আরও বলেন, রংপুরের শব্দ দূষণ রোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
বিশেষ অতিথি পুলিশ সুপার জনাব মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, যেকোন সমস্যা সমাধান কল্পে ৪টি বিষয় এর সমন্বয় জরুরী যথা- শিক্ষা, অনুমোদনকারী সংস্থা, এনফোর্সমেন্ট এবং মনিটরিং। আমরা সবাই কোন না কোন ভাবে শব্দ দূষনের শিকার। এ থেকে পরিত্রান পেতে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে শব্দ দূষণ বিষয়ক শিক্ষা সংযুক্ত করা যেতে পারে, এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সচেতন হবে। তিনি আরও বলেন, রংপুর পুলিশের পক্ষ হতে শব্দ দূষণরোধে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করা হবে।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর পক্ষ হতে আমরা ২০২২ সালে ১৯ দিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার মাধ্যমে; ১৬টি বাস, ৩৮টি ট্রাক ও ১টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৫৬৫০০ টাকা জরিমানা করেছি এবং ১০৫টি হাইড্রোলিক হর্ণ জব্দ করা করেছি। ২০২৩ সালে ১০ জানুয়ারী ১টি প্রতিষ্ঠানকে ৫০০০ টাকা; ২৩ জানুয়ারী ৪টি বাসকে ৮০০০ টাকা ও ৮টি হাইড্রোলিক হর্ণ জব্দ করা হয়েছে। শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে শব্দ দূষণ রোধ করা সম্ভব নয়, এজন্য আমাদের সকল শ্রেণীর মানুষের সহযোগীতা প্রয়োজন।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওগ্রাফি ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের বিভাগের এক গবেষনায় দেখা যায়, রংপুর জেলায় শব্দের মাত্রা প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ডেসিবল। শব্দের প্রধান উৎস হিসাবে উন্নয়নমূলক নির্মান কাজ পরিলক্ষিত হয়েছে। এর সমাধানকল্পে নির্মাণের সময় শব্দ উৎপন্ন হয় এমন কাজ যেমন-ইট ভাঙ্গা, টাইলস কাটা ইত্যাদি কাজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল এবং বাসাবাড়ী ইত্যাদি হতে দূরে কোথাও সম্পন্ন করে পরবর্তীতে নির্মানস্থলে নিয়ে এসে স্থাপন করতে পারি।
রংপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুর রহমান বলেন, শব্দ অন্যতম উৎস মাইক। প্রতিটি ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের মাইক ব্যবহার যেন সমাবেশস্থলে সীমিত থাকে এজন্য তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাভিশন টিভির সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী জুয়েল আহমেদ বলেন শব্দ দূষণ একটি সন্ত্রাস, এটি রোধে আত্মসচেতনতাই মূখ্য। হাইড্রোলিক হর্ণ হ্রাসে স্থানীয় মোটর পার্টস দোকানে যেন তা বিক্রয় ও সংস্থাপন না হয় এজন্য তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেন।