জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃজয়পুরহাটে পোল্ট্রি ক্ষুদ্র -উদ্যেক্তাদের দেশী মুরগি ইকোলজিক্যাল ফার্মিং চর্চার এবং প্রসার উপ-প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর ) জেআরডিএম সম্মেলন কক্ষে জেআরডিএমের আয়োজনে সমাপনী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেআরডিএমের নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা:মহির উদ্দিন, জেআরডিএমের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর শওকত আলী, সহকারি পরিচালক কৃষিবিদ এন. এম ওয়ালিউজ্জামান, এসইপি প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা: স্বপন খালকো।
আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: রাশেদুজ্জামান , জামালগঞ্জ সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার, কৃষিবিদ জুয়েল রানা, সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: জিয়াউর রহমান, ক্ষেতলাল উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ড্: সাগরিকা কাজ্জীসহ অন্যরা।
জেআরডিএমের এসইপি প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা: স্বপন খালকো বলেন, পিকেএসএফের অর্থায়নে জেআরডিএমের কারগরি সহযোগিতায় এসইপি প্রজেক্টের আওতায় পোল্ট্রি মার্ভিস সেন্টার
জৈব নিরাপদ পোল্ট্রি খামার তৈরী, ভ্যাক্সিনেশন, সঠিক মাত্রার এন্টিবায়োটিক ব্যবহার, খামারের ডিজাইন, ফিড তৈরির নিয়ম, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক ব্যবহারের মাধ্যমে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত খামার গঠন, ময়নাতদন্ত ও ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে মুরগির সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা। দেশি মুরগির প্যারেন্ট স্টক খামার পরিবেশসম্মত উপায়ে দেশি মুরগির বিস্তারে, ডিম ও এক দিনের বাচ্চা উৎপাদন বৃদ্ধি করা। দেশি মুরগির প্রদর্শনী খামার দেশি মুরগি পালনে উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধকরণের জন্য প্রদর্শনী খামার স্থাপন করা হবে। জৈব নিরাপত্তা প্রদর্শনী খামার
পরিবেশ সম্মত ও জৈব নিরাপদ খামার তৈরির জন্য নির্বাচিত খামারিদের মাঝে জৈব নিরাপত্তা সামগ্রী বিতরণ করা হবে। জৈব বর্জ্য কম্পোস্টিং চেম্বারে পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার মাধ্যমে খামারের মানসম্মত পরিবেশ বজায় রাখি ও রোগ জীবাণু ছড়ানো থেকে বিরত থাকি । মানসম্মত মুরগি প্রিমিয়াম মার্কেটে প্রবেশ সহজিকরণ প্রকল্পভুক্ত খামারিদের দ্বারা উৎপাদিত দেশি ও নিরাপদ উপায়ে পালিত সোনালি মুরগির মাংস ও ডিম ব্র্যান্ডিং এর জন্য অনলাইনভিত্তিক প্রচার প্রচারণা বাড়ানো হবে।
জামালগঞ্জ সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামারের পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট অফিসার কৃষিবিদ জুয়েল রানা বলেন,দেশি মুরগি পালনের তুলনামূলক সুবিধা হলো ক্রমবর্ধমান বাজার চাহিদা। অন্যান্য জাতের থেকে পালন খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। দেশি মুরগি পালনের জন্য খুব বেশি জায়গা প্রয়োজন নেই ।সাধারণ খাবার যেমন বীজ, ঘাস, মাটি কৃমি, পোকামাকড় এবংরসামান্য পরিপূরক খাদ্য দিয়ে দেশীয় মুরগি পালন করা যায়। অল্প যত্ন, ন্যুনতম আর্থিক উপকরণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই দেশি মুরগি পালন করা সম্ভব।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: জিয়াউর রহমান বলেন, দেশি মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য সংকর মুরগির চেয়ে
বহুগুণে বেশি। দেশি মুরগি সাধারণত রাণীক্ষেত, গুটি বসন্ত, কৃমি, কলেরা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়। তবে নিয়মিত টিকা ও কৃমিনাশকেপ্রয়োগের মাধ্যমে এসকল রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
আক্কেলপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রাশেদুজ্জামান বলেন, কেন দেশি মুরগি পালন করব? কারণ, মুরগি পালন করে যে কেউ দারুণ লাভবান হতে পারে। বাজারে দেশি মুরগির চাহিদা সব সময় অধিক থাকে, এটাই দেশি মুরগি পালনের সবথেকে বড় কারন। অন্যান্য জাতের থেকে পালন খরচ অনেক কম।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায়, রোগবালাই এর প্রকোপ তুলনামুলক কম থাকে। দেশি মুরগি পালনের জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন নেই। সাধারন খাবার যেমন বীজ, ঘাস, মাটি কৃমি, পোকামাকড় এবং সামান্য পরিপূরক খাদ্য দিয়ে দেশি মুরগি পালন করা যায়। অল্পযত্ন, ন্যুনতম আর্থিক উপকরণ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই দেশি মুরগি পালন করা সম্ভব। আধানিবিড় পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। জৈব এবং প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভোক্তাগণ দেশি মুরগিকে প্রিমিয়াম মূল্য দেয়া শুরু করেছে।
জয়পুরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা: মহির উদ্দীন বলেন, আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন বানিজ্যিকভাবে দেশি মুরগি পালনের ক্ষেত্রে আধানিবিড় পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সনাতন পদ্ধতির সাথে আধানিবিড় পদ্ধতির পার্থক্য মুলত বাসস্থান, খাবার ও খরচের মধ্যে। সনাতন পদ্ধতিতে একটি ৩৫ দিন, অন্যদিকে আধানিবিড় পদ্ধতিতে সময়লাগে মাত্র সম্পূর্ণ হতে সময়লাগে ১৩০-১৩৫ দিন, অন্যদিকে আদানিবিড় পদ্ধতিতে সময় লাগে মাত্র ৮০-৯০ দিন। যা ডিম ও মাংসের উৎপাদনকে দ্বিগুন করে। ঠিক এই কারণেই বানিজ্যিক ভাবে দেশি মুরগি পালনে আধানিবিড় পদ্ধতি আদর্শ। আবার এতে পরিশ্রমও খুব বেশী হয়না। সেই সাথে রোগবালাই কম হয়।
জেআরডিএমের নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা বলেন, দেশী মুরগি স্বাদ ও মানে অনন্য। বর্তমান বাজারে মুরগির কোনো অভাব না থাকলেও দেশি মুরগির চাহিদা চোখে পড়ার মত। আর প্রিমিয়াম দাম থাকার কারণে, সঠিক পদ্ধতিতে দেশি পালন করে যে কেউ দারুণ লাভবান হতে পারে। এজন্য পিকেএসএফ এর অর্থায়নে জেআরডিএমের কারিগরি সহায়তায় এসইপি প্রজক্টে বেকারত্ব দুরীকরণে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে দেশী মুরগি পালনে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।