প্রবাসে মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে মানবতার পাশে দাঁড়ান জহির। অসহায় প্রবাসীদের সেবাই যেন তার ধ্যানজ্ঞান। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ছুটে যাচ্ছেন প্রবাসীদের কাছে। ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই বিখ্যাত উক্তিটি যেন মিলে যায় জহিরুল ইসলাম জহিরের সঙ্গে।
বৈশ্বিক করোনা মহামারি সময় সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় প্রবাসী জনহিতৈষীদের পাশাপশি অসহায় মানুষের পাশে থেকে রাত-বিরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন জহির। দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা। করোনা মহামারি সময়ে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। কিন্তু জহির যেখানেই শুনেছেন প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, (হাসপাতালে) সেখানেই ছুটে গেছেন।
একজন অসুস্থ প্রবাসীকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন জহিরুল
যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সেবক হয়ে হাসপাতাল ,দূতাবাস ও বিভিন্ন কবরস্থান পর্যন্ত ছোটাছুটি করেছেন। অসুস্থ রোগী, মরদেহ দাফন ও দেশে পাঠানোসহ প্রায় ৩০০ এর বেশি প্রবাসীকে সহযোগিতা করেছেন। এ মানবিক কাজে কুয়ালালামপুর হাসপাতালসহ একাধিক হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবিরা জহিরকে এক নামে চেনেন।
শরীয়তপুরের সখিপুর থানার চরভাগা ঢালী কান্দির মৃত হারুন অর রশিদ বেপারীর ছেলে মো. জহিরুল ইসলাম জহির (৪২), ২০০৫ সালে স্টুডেন্ট ভিসায় পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি তখন ব্যবসায়ও জড়িয়ে পড়েন। ব্যস্ততার মধ্যেও ২০০৭ সাল থেকেই অসহায় প্রবাসীদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন।
একজন অসুস্থ প্রবাসীর সঙ্গে কথা বলছেন জহিরুল ইসলাম জহির
শনিবার (১১ জুন) কথা হলে জহির বলেন, ঢাকাতে থাকাকালীন যখন কলেজে ভর্তি হলাম তখন থেকেই বিভিন্নভাবে সামাজিক কাজে এগিয়ে যেতাম। ২০০৫ সালে যখন মালয়েশিয়া আসি তখন থেকে প্রবাসে সাধারণ লোকজনের অসহায়ত্ব দেখে যেভাবেই হোক তাদের পাশে দাঁড়াতাম।
তবে ২০০৭ সালের কলিং ভিসায় হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মী অনাহারে, অর্ধাহারে রাস্তায় শুয়ে থাকতো তখন থেকেই আরো বেশি মানবসেবায় এগিয়ে যাই। তখন আমি ছাত্রলীগ করতাম। বর্তমানে মালয়েশিয়া যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য।
জহির বলেন, বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের বিভিন্নভাবে খারাপ মন্তব্য করে থাকেন। তার মতে রাজনীতি করতে হলে সত্যিকারের জনসেবা করতে হয়।
এক অসুস্থ প্রবাসীকে দেশে পাঠাতে সহযোগিতা করছেন জহিরুল
তবে রাজনৈতিক নেতাদের উচিত সাধারণ মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে সততার দিক থেকে মানবতার কাজে এগিয়ে যাওয়ার কথা ব্যক্ত করে জহিরুল ইসলাম জহির বলেন, সত্যি কথা বলতে গেলে সামাজিক কাজগুলো এখন আমার নেশায় পরিণত হয়ে গেছে।
একজন অসহায় মানুষের উপকার করতে পারলে নিজের আত্মায় শান্তি লাগে। মানবিক কাজে নেমে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। মালয়েশিয়াতে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশের এমন কোনো জেলায় নেই একজন লোকের পাশে আমি দাঁড়াইনি।
করোনায় মুত্যুবরণকারী একজন প্রবাসীর দাফন সম্পন্ন করতে হাইকমিশনের ছাড়পত্র হাতে জহিরুল ইসলাম জহির
শত শত পরিবারের লোকজন বাংলাদেশ থেকে ফোন করে এক নজর আমাকে দেখতে চায় তখন মনে মনের আত্মতৃপ্তি পাই, এটাই আমার জীবনের স্বার্থকতা। যখন ফোন করে লোকজন বলেন, বাবা, ভাই আমি তাহাজ্জুদ ও ফজর নামাজ পড়ে তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য দোয়া করেছেন তখন মনে হয় আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য ভালো একটা কিছু করতে পেরেছি।
জহির বলেন, যেখানেই থাকি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানবতার কাজে যেন নিয়োজিত থাকতে পারি।