হজ-ওমরাহ কষ্টসাধ্য ইবাদত। হজের জন্য আর্থিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক প্রস্তুতিও জরুরি। কারণ শারীরিক সক্ষমতা না থাকলে হজের বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব নয়। হজ-ওমরার জন্য বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রস্তুতি আবশ্যক। তাহলো-
১. আকিদা-বিশ্বাসের সংশোধন
সঠিক আকিদা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিম জীবন। যার আকিদা ঠিক নেই তার জীবন ব্যর্থ। মুসলিম ব্যক্তির প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে, নিজেদের আকিদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে কুফরি করবে, তার আমল নষ্ট হয়ে যাবে। সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫)
হজের মতো ফরজ ইবাদত পালনের আগে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের আকিদা-বিশ্বাস বিশুদ্ধ করা জরুরি। কুফরি, শিরকি, বিদাতি ও ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত আবশ্যক।
মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও অনেক মুসলিম যেমন মসজিদে যায়, তেমনি তারা মাজারে গিয়ে সেজদা করে আবার মক্কায় যেমন যায়, তেমনি তারা মন্দিরেও যায়। সমাজে এদের সংখ্যা কম নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের অধিকাংশ; যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তারা মুশরিক।’ (সুরা ইউসুফ : আয়াত ১০৬)
তাই হজ-ওমরাসহ ইসলামে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য শিরকমুক্ত ঈমানি চেতনা জরুরি। তবেই বান্দার ছোট-বড় সব আমল আল্লাহর কাছে কবুল হবে। কারণ আকিদার-বিশ্বাসের উপর সব আমল কবুল হওয়া নির্ভরশীল। নবিজী বলেছেন, ‘সব আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।’
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো আমল কবুল করেন না, যদি তার জন্য খালেছ হৃদয়ে ও তার সন্তুষ্টির জন্য করা না হয়।’ বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
এজন্য বলা হয়, বিশুদ্ধ আকিদা দ্বীন ইসলামের শিকড় এবং মুসলিম মিল্লাতের সুদৃঢ় ভিত্তি।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বরকতময় আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি শিরককারীদের শিরক থেকে মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো আমল করে আর তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরিক করে; আমি তাকে এবং তার শরিককে বর্জন করি।’ (মুসলিম)
২. বৈধ সম্পদ সংগ্রহ
ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্ত হচ্ছে, হালাল রুজি তথা অর্থ সংগ্রহ। হজ-ওমরার জন্য এর বিকল্প নেই। নবিজী বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র বস্তু ছাড়া কবুল করেন না।’ (মুসলিম)
কারো খাদ্য, পানীয় ও পোশাক হারাম হলে তার কোনো ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই প্রত্যেকের সতর্ক থাকতে হবে, খাদ্য, পানীয়, পোশাক ও আসবাব-পত্র হালাল নাকি হারাম। কোনো ধরনের দুর্নীতি ও অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত অর্থে হজ-ওমরা করা হলে তা কবুল হবে না।
৩. হজ প্রশিক্ষণ
হজে যাওয়ার আগে হজ-ওমরাহ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি। প্রশিক্ষণ ছাড়া হজে গেলে এর রোকন ও বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে ভুল করে ফেলেন। যে কারণে অনেকের কাফফারা গুনতে হয়। এ জ্ঞান না থাকার ফলে অনেকের হজ সম্পাদনও হয় না। এ জন্য যোগ্য সঙ্গী তথা আলেম-ওলামার সঙ্গে হজে যাওয়ার বিকল্প নেই।