তরিকুল ইসলাম:রমজানের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কোনো প্রভাব পড়ছে না বাজারে। অনেকটাই বেড়ে গেছে দাম।নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন ক্রেতারা।
আজ শুক্রবার (৮ মার্চ) ছিল রোজা শুরুর আগের ছুটির দিন। তাই অনেকেই প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার প্রস্তুতি নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন আজ । কিন্তু বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিনতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে ফিরছেন ক্রেতারা।
ক্রেতারা বলেছেন, আগের রোজা থেকে এ রোজায় খেজুর, ছোলা, ডাল, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম অনেকটাই বেড়েছে। যা অনেকটা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।
জানা গেছে, খেজুরের দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে। বাজারে এখন এক কেজি সাধারণ মানের খেজুরের দাম ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর রোজার আগ মুহূর্তে এ ধরনের খেজুরের কেজি ছিল ২০০ থেকে ২২০ টাকা। তাছাড়া ভালো মানের খেজুর ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, গত রমজানের থেকে ৪০০ টাকা বেশি।
ছোলা কেজিতে বেড়েছে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা। এক কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। গতবছর বাজারে এ সময় ছোলার কেজি ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। একইভাবে বেড়েছে খেসারি ডালের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। যা গতবছর ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে ছিল।
অন্যান্য ডালের মধ্যে প্রতি কেজি মোটা, মাঝারি মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আর মুগ ডালের কেজি পড়ছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা।
বাজারে বেড়েছে চিনির দাম। গত বছর এ সময় প্রতি কেজি চিনি কেনা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। এখন কিনতে হলে ভোক্তাকে গুণতে হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। অর্থাৎ চিনির কেজিতে এক বছরের ব্যবধানে ক্রেতাদের বেশি খরচ করতে হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে বিক্রেতার বলছেন, খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের কিছুই করার নেই। তারা যে দামে কিনে আনেন তার থেকে কিছুটা লাভে বিক্রি করেন। সরকারের মিলগুলো এবং পাইকারি বাজারে কঠিন মনিটরিং করা দরকার।
রোজায় যদিও পণ্যের দামের লাগাম টানতে সরকার গত ৮ ফেব্রুয়ারি খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল ও চাল আমদানিতে শুল্কছাড় দিয়েছিল। তবে সয়াবিন তেল ছাড়া অন্য তিন পণ্যে দাম সামান্যও কমেনি বরং বেড়েছে। সয়াবিন তেলেও সবাই সুফল পাচ্ছে না। কারণ বাজারে ১ মার্চ থেকে নতুন কম দামের সয়াবিন তেল সরবরাহ করার কথা থাকলেও এখনো বেশিরভাগ দোকানে পুরোনো দামের তেল বিক্রি হচ্ছে। কিছু দোকানে কম দরের পাঁচ লিটারের বোতল আসলেও এক বা দুই লিটারের বোতলের দেখা মিলছে না।
রমজান এলেও কমছে না পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম। গতবছর রোজার আগে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সেই দাম এখন প্রায় তিন গুণ। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২৫ টাকা। সেই হিসেবে এক কেজি পেঁয়াজে বেশি খরচ হবে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা।
প্রতি কেজি আদা খুচরা বাজারে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা ও রসুন ২২০ থেকে ২৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা গত রমজান থেকে প্রায় প্রতি কেজি ১০০ টাকা বেশি।
বাজারে ব্রয়লার মুরগির এখনো গত বছরের দামকে অতিক্রম করেনি। যদিও গত দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। দুই দিন আগে কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৩৫ টাকা। গত বছর এ সময় দর ছিল ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা।
প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা দরে। যা গত বছর রোজার আগে ছিল ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা।