Logo
আজঃ শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪
শিরোনাম

ওলকচু চাষে লাভবান হচ্ছে মাগুরার চাষিরা

প্রকাশিত:শনিবার ২২ জুলাই ২০২৩ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ | ৩৬৫জন দেখেছেন

Image

মাগুরা থেকে:মাগুরায় ওলকচু চাষে কৃষকরা হচ্ছেন লাভবান ।ওলকচু চাষকরে সফলতায় কচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে মাগুরা জেলার মাগুরা সদর উপজেলার দারিয়াপুর গ্রাম। মাগুরায় এই প্রথমবারের মতো ওলকচু চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন সদরের হাজীপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের শতাধিক কৃষক । বাড়ির পাশে পতিত জমিতে, লিচু,আম বাগানের মধ্যে ও মাঠে ওলকচু চাষ করছেন এ এলাকার প্রায় শতাধিক কৃষক । বীজ বপন করার পর সাধারণত ৫-৬ মাসে পরিপূণ হয় ওলকচু । মাটির নিচে এ ফসলটি পরিপক্ক হলে ১০-১২ কেজি ওজন হয় । বর্তমানে জেলায় এ চাষ কম হলেও লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এ চাষে কৃষকরা আগ্রহ বাড়ছে । মাগুরা সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় ,এ গ্রামের অধিকাংশ কৃষকরা প্রায় ৩৬ বিঘা জমিতে এ ওলকচু চাষ করছেন । এলাকার কৃষকরা বলছেন,এ চাষে একটু পরিশ্রম বেশি এবং পরিপক্ক হয়ে উঠতে সময় লাগে । তারপরেও এ ফসলটির চাহিদা জেলায় ও জেলার বাইরে অনেক কদর রয়েছে । আগে মানুষ এ ফসলটি তেমন খেত না কিন্তু বর্তমানে সব সম্প্রদায়ের মানুষের চাহিদা রয়েছে ওলকচু খেতে । এটির অনেক গুণও রয়েছে । ভর্ত্তা,ভাজি ও তরকারিতে মাছের সাথে রান্না করলে খেতে খুবই স্বাসাদু লাগে । তাই বর্তমানে ওলকচুর চাহিদা বাড়ছে । মাগুরা সদর উপজেলার দ্বারিয়াপুর গ্রামের ওলকচু চাষী ভক্ত কুমার বিশ্বাস জানান,সে প্রথমবারের মতো ৬ বিঘা জমিতে ওলকচু চাষে সাফল্য পেয়েছে । গতবছর এ চাষে তার কিছুটা অনাগ্রহ ছিল । কিন্তু জেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে সে আবার চাষ শুরু করে । চাষে কিছুটা পরিশ্রম আছে । তাই ধৈর্য্যসহ কারে আবাদ করলে এ চাষে সাফল্য আসে । সে জেলা কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বীজ পাওয়ার পর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে মাঠে বীজ রোপন করে । বীজ রোপনের পর মাঠের পরিচর্যা আরো বাড়ায় । তারপর বীজ থেকে চারা গজালে ধীরে ধীরে বড় হলে গাছের আগাছা পরিস্কার করতে হয় । ওলকচু উঠতে দুই মাস বাকী । আগামী ভাদ্র মাসের শেষে অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শুরুতে ওলকচু উঠাতে হবে । কৃষকরা জানায়, ,মাটির নিচ থেকে ওলকচু উঠাতে হলে প্রথমে কোদালের সাহায্যে গোড়া খুজতে হবে । একটি ওলকচু ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে । তাই শ্রমিক দিয়ে এ কাজ করতে হয় । ৬ বিঘা জমিতে এ ওলকচু উঠাতে ২ সপ্তাহ লাগে । বিঘাপ্রতি চলতি বছর ১৮০-২০০ মণ ওলকচু পাবে বলে তারা আশা করছে । একজন র্কষক জানিান, চলতি বছর তার শ্রমিক ও খরচ বাদে ৮ লাখ টাকা লাভ হবে বলে মনে করছে। । বর্তমানে মাগুরা জেলার ওলকচু জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা,চট্রগ্রাম,রাজশাহী,দিনাজপুর,বরিশাল,ফরিদপুর,মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে । আগের থেকে বর্তমানে ওলকচু চাহিদা বাড়ছে । তাই তাদের গ্রামের অনেকে এখন এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

একই গ্রামের কৃষক উজ্জল বিশ্বাস বলেন,সে এবার ২ বিঘা জমিতে এ ওলকচু চাষ করেছে । গত বছর ১ বিঘায় এ চাষে ভালো লাভবান হয়েছি তাই এ বছর আরো ১ বিঘা বেশি আবাদ করেছে । তিনি জানান, তাদের গ্রামের অনেকে এখনওলকচু চাষ করছে । এ চাষে একটু পরিশ্রম বেশি কারণ এ ফসলটি মাটির নিচে থেকে খুড়ে বের করতে হয় তাই শ্রমিক মুজুরি অনেক বেশি । বিঘাপ্রতি শ্রমিকের খরচ রয়েছে ২ হাজার টাকা । প্রতি ওলকচু গাছে ১০-১২ কেজি হয় । তাই তাদের খরচ অনেকাংশে উঠে আসে । সব কিছু বাদে লাভ ভালো হয় । মাগুরা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত ) মো: মোশাররফ হোসেন বলেন,ওলকচু একটি কন্দাল জাতীয় ফসল । মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি বছর জেলায় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রেখেছে ।এ বছর জেলায় ৪৮ হেক্টর জমিতে এ চাষ হয়েছে । এ চাষে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হবে ৩০ টন । এ চাষে পরিশ্রম থাকলেও লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এ চাষে জেলার কৃষকরা আগ্রহ বাড়াচ্ছে । জেলা কৃষি বিভাগ এ চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বীজ ও সার প্রদান করেছে । এ চাষে প্রাথমিক পযার্যে মাটিতে গর্ত করে গোরব সার,খড়কুটা,টিএসটি ও ডি এ ইউরিয়া একত্রে মিশিয়ে মাটি প্রস্তত করতে হবে । তারপর বীজ রোপনের পর যতœ বাড়াতে হবে । একটি পরিপক্ক ওলগাছে ১০-১২ কেজি ওল পাওয়া যায় । সাধারণ নিচু ও ছায়াযুক্ত স্থানে এ চাষ ভালো হয় । এ চাষে জেলার কৃষকদের আগ্রহ বাড়লে আগামীতে সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হবে বলে জানান কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা। ।


আরও খবর



চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের ১ পাইলট নিহত

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ | ৭৭জন দেখেছেন

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক:অসীম জাওয়াদ নামে এক পাইলট চট্টগ্রামে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় চিকিৎসা নিচ্ছেন আহত কো-পাইলট।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুর সাড় ১২টার দিকে পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) পাইলট জাওয়াদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) শাকিলা সোলতানা।

তিনি বলেন, ‘বিমান বাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নেমে এলে তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বেলা ১২টার দিকে তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসীম জাওয়াদ নামে একজনের মৃত্যু হয়

এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমান বাহিনীর ওয়াইএকে১৩০ নামক যুদ্ধবিমানটি উড্ডয়নকালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এ সময় বিমানটির পেছন দিকে আগুন লেগে যায় এবং চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের অদূরে কর্ণফুলী নদীতে আছড়ে পড়ে।


আরও খবর



কুষ্টিয়ায় ডা: লিজা নার্সিং ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের নবীন বরন অনুষ্ঠান

প্রকাশিত:সোমবার ১৩ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ | ৫১জন দেখেছেন

Image
কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃকুষ্টিয়ায় ডা: লিজা নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের নবীন বরন অনুষ্ঠান ১৩ মে ২০২৪ইং সোমবার সকালে কুষ্টিয়ার ডা: লিজা নার্সিং ইনস্টিটিউট গ্যালারীতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডা: লিজা নার্সিং ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ডা: এএফএম আমিনুল হক রতনের সভাপতিত্বে ও ডা: লিজা-ডা: রতন ম্যাটসের চেয়ারম্যান ডা: আসমা জাহান লিজার সার্বিক পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা: আকুল উদ্দিন, জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাফসিরুল হক মুন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডা: তাপস কুমার সরকার, নার্সিং ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়ার নার্সিং ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ স্মৃতি কনা রাণী, নাসিবের পরিচালক আব্দুস সাত্তার, প্রাইভেট ক্লিনিক ওনার্স এসোসিয়েশন কুষ্টিয়ার সাধারণ সম্পাদক আরাফাত জামান তপন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে চিকিৎসকের আগে নার্সরাই এগিয়ে আসে। রোগীদের সেবাযত্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পাশাপাশি নার্সদেরও গুরুত্বও কোন অংশে কম নয়। তাই নার্সিং এর পেশার প্রতি শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিতে হবে এবং এ পেশার প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলায় বিশেষ অবদান রেখে চলেছে কুষ্টিয়ার এই ডা: লিজা নার্সিং ইনস্টিটিউট। নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তারা ব'লেন, এখান থেকে পড়াশোনা শেষে আপনাদের চাকরি হলে সেটা হবে সেবক/সেবিকা। আর সেবক হিসেবে আপনারা মানুষকে সেবা প্রদান করবেন। কারন, সেবক সেবিকারা অসুস্থ রোগীদের সুস্থ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যোগ্য সেবক/সেবিকা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে বলেও জানান বক্তারা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডা: লিজা নার্সিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আসমা খাতুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তিমন মন্ডল ও বৃষ্টি সরকার।পবিত্র কোরআন তেলোয়াত ও  জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। এরপর অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পাশাপাশি নবীন শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে এবং তাদের ফুল ও মিষ্টিমুখ করিয়ে শুভেচ্ছা জানান অতিথিবৃন্দ। পরে মনোজ্ঞ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্তি হয় ।

আরও খবর



রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ২১

প্রকাশিত:বুধবার ০৮ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ১৫ মে ২০২৪ | ৭৩জন দেখেছেন

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক:মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

বুধবার (৮ মে) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের হেফাজত থেকে ৩ হাজার ২৪৯ পিস ইয়াবা, ১৫৬ গ্রাম হেরোইন, ১২ কেজি ৩১৬ গ্রাম গাঁজা ও ৭ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৭টি মামলা করা হয়েছে।


আরও খবর



মহান মে দিবস, বঙ্গবন্ধু ও শ্রমিক অধিকার

প্রকাশিত:বুধবার ০১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ | ১৩০জন দেখেছেন

Image

লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল ॥১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যা বিশ্ব পরিমন্ডলে ‘মহান মে দিবস’ বা শ্রমিক দিবস হিসেবে গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়। বিশ্বের শ্রমজীবী-কর্মজীবী, পেশাজীবী, মেহনতি মানুষের ঐক্য, সংহতি, সংগ্রাম, সাফল্য ও বিজয়ের দিন মহান মে দিবস। মে দিবস এলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে ঘর্মাক্ত মেহনতি-শ্রমজীবী মানুষের প্রতিচ্ছবি। আর এই শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের প্রশ্নটিও সাথে সাথে উঠে আসে এই ঐতিহাসিক দিনে। এই দিবসের তাৎপর্য অনেক, এর পেছনে রয়েছে একটি রক্তস্নাত ইতিহাস। ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে আট ঘণ্টা শ্রম দিবস, মজুরী বৃদ্ধি, কাজের উন্নতর পরিবেশ ও শ্রমের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলনে আত্মহুতি দান করেছিলেন শ্রমিকরা, ১ মে তারিখে বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট সমাবেশে পুলিশের গুলি বর্ষণে ৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। এর প্রতিবাদে পরদিন হে মার্কেটে শ্রমিকরা মিলিত হলে কারখানার মালিকরা সেখানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং এতে ৪ শ্রমিক নিহত হয়। শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন করার দায়ে অগস্ট স্পাইস নামে এক শ্রমিক নেতাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। ১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিষ্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষিত হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেণী কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে।

রাশিয়া এবং পরবর্তীতে আরো কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংগঠিত হবার পর মে দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য অর্জন করে। জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ইন্টারন্যাশনাল লেবার অরগানাইজেশন বা আইএলও) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার সমূহ স্বীকৃতি লাভ করে। আইএলও কতগুলো নিয়মকানুন প্রতিষ্ঠা করে এবং সকল দেশের শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহ্বান জানায় এবং এভাবে শ্রমিক ও মালিকদের অধিকার সংরক্ষণ করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ আইএলও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালায় স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে।
রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংশ্লিষ্ট শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বাণী দিয়ে থাকেন। মে দিবসের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্যে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বা প্রবন্ধ কিংবা বিশেষ নিবন্ধন প্রকাশ করে। মাথায় রঙ-বেরঙের কাপড় বেধে নানা রঙের ফেস্টুনসহ শ্রমিকরা মিছিল শোভাযাত্রা বের করে, বেতার ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠানাদির ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশাজীবী, শ্রমজীবী এবং সামাজিক -সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। দেশের সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এই সকল সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের খবর গুরুত্বসহকারে প্রচার করে থাকে। বাংলাদেশ মে দিবস পালনের ক্ষেত্রে মোটেও পিছিয়ে নেই। এ দেশে ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৮ সালে নারায়ণগঞ্জে প্রথম মে দিবস পালিত হয়। তারপর পাকিস্তান আমলেও মে দিবস যথেষ্ট উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে হাজার হাজার শ্রমিক অংশগ্রহণ করে এবং দেশ মাতৃকার জন্যে শহীদ হয়।

১৯৭২ সালে ১ মে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১ মে-কে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা সহ রাষ্ট্রপতি আদেশ ২৭(ক) ধারা মোতাবেক এদেশের সকল ব্যাংক, বীমা, শিল্প- কলকারখানা, রেল, নৌ-পরিবহনসহ  বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগ রাষ্ট্রায়ত্ব ঘোষণা করেন। ফলে এর সুফলও ঐ সকল শিল্প কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীগণ ভোগ করতে থাকেন। সরকার নীট মুনাফার ৫% শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে সমহারে বন্টনের ঘোষণা দেয়, ফলে বেশ কিছু শিল্পে উৎপাদন ও মুনাফা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ১৯৭৭সালে প্রথম পাকিস্তানী অবাঙালিদের রেখে যাওয়া কিছু কিছু শিল্প কলকারখানা ব্যক্তি মালিকানায় দেওয়া শুরু করেন, পরবর্তীতে জেনারেল এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়ার সরকার কম-বেশী সবাই ব্যক্তি মালিকানায় মিল কলকারখানা হস্তান্তর করেন। আটের দশকের শেষের দিকে পূর্ব-ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতনের পর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো অতিদ্রুত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক কর্মসূচী পরিত্যাগ করে বাজার অর্থনীতি তথা মুক্তবাজার অর্থনীতি রাষ্ট্রীয় পলিসি হিসেবে ঘোষণা করেন।

এই সব কারণে একদিকে যেমন শোষণ- নির্যাতন বেড়েছে অপর দিকে ব্যক্তির লুটপাটে পানির দামে ক্রয়কৃত চালু মিল কলকারখানাগুলো একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। দেশ আজ আমদানি নির্ভর একটি সিন্ডিকেট চক্রের হাতে জিম্মি । বাংলাদেশে আজ শ্রমিকদের অবস্থা খুবই নাজুক । নারী-পুরুষের মুজুরী  বৈষম্যতো আছেই, এছাড়াও প্রায় সকল সেক্টরে ৮ ঘন্টার বেশী শ্রম দিতে হয়। হোটেল- রেস্তোরায় ও পরিবহন সেক্টরে ভোর ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত শ্রমিক খাটানো হয়, তারপরও নেই কোন নিয়োগপত্র, নেই কোন মজুরী কাঠামো, নেই কোন উৎসব ভাতা কিংবা চিকিৎসাভাতা, এই সব সেক্টরে অধিকাংশ শিশু শ্রমিক নিয়োজিত আছে। দেশের তৈরী পোশাকশিল্প , চাউলের কল, চাতাল, চিংড়ী ঘের ও কৃষি কাজে হাজার হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিক কর্মরত আছে। এখানেও তাদের নেই কোন মজুরী কাঠামো বা নির্ধারিত শ্রম ঘন্টা অথবা কর্মের উপযুক্ত পরিবেশ, এমনকি শ্রমিকদের নেই নিজের জীবনের নূন্যতম নিরাপত্তা, অথচ তাঁরাই নিজের শ্রম দিয়ে, ঘাম দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা চালু রেখেছেন। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে শ্রমিক হত্যাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ১,৫০০ শ্রমিক নিহত এবং দুইসহস্রাধিক শ্রমিক আহত হয়ে পঙ্গুবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। বাহ্যিকভাবে এটি দুর্ঘটনা। একটি ভবন ধসে লোক হতাহত হয়েছেন।

আসলে এটা কি শুধুই দুর্ঘটনা? কথিত দুর্ঘটনার আগের দিন ভবনটিতে ভয়াবহ ফাটল দেখা যায়। লোকজন ভবন ছেড়ে চলে যায়। পরের দিন ভবনে অবস্থিত কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দুর্ঘটনার আশংকায় খোলেনি। সেখানে গার্মেন্টস শিল্পে কাজ করার জন্যে প্রায় ৪ হাজার শ্রমিককে চাকরির ভয়ভীতি দেখিয়ে ঐ ভবনের ভেতরে নেয়া হয়। তারপর এই দুর্ঘটনা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবনটি বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করে সিলগালা করে বন্ধ করতে অসুবিধা কোথায় ছিল? ভবনটি নির্মাণে রাজউকের কোন অনুমোদন ছিল না। ভবন মালিক পৌরসভা থেকে ছয় তলা করার অনুমোদন নিয়ে, সেখানে নয় তলা ভবন তৈরী করলো কিভাবে? এই ভবন ধসের বিষয়টি মানবসৃষ্ট, কাজেই এই বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি নিছক দুর্ঘটনা নয়, ইহা হত্যাকান্ড। ফলে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দায়ী সব পোশাক শিল্পের মালিকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শ্রমিক হত্যার জন্য দায়ী পোশাক শিল্পের মালিকদের বাঁচানোর যে চেষ্টা অতীতে বিজিএমইএ করে এসেছে, তা থেকে তারা সরে আসবে বলে আশা করছি। দেশের তৈরী পোশাকশিল্প খাতকে বাঁচানোর স্বার্থেই এটা করতে হবে।কর্মস্থলে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রানা প্লাজা হতাহত শ্রমিকদের অনেকেই আজও তাদের ক্ষতিপূরণ পায়নি।

এমনকি নিখোঁজ শ্রমিকদের স্বজনরা শত চেষ্টা করেও খোঁজ কিংবা নিহত শ্রমিকের লাশও পায়নি। এই ভবন ধসের ঘটনার অভিজ্ঞতা নিয়ে অনুরূপ ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি অন্যান্য কারখানায় না ঘটে সেরকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি।

মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম-আন্দোলনে বাংলাদেশের শ্রমিকদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে আছে। বাংলাদেশের শ্রমক্ষেত্রে যত আইন, নীতি, বিধি-বিধান ও নীতিমালা রয়েছে তা মূলত দেশের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা তথা শ্রমক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা  ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শ্রমিজীবী মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশী। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে শ্রমিকদের একাগ্রতা ও শ্রমিক-মালিকের পারস্পরিক সুসম্পর্ক অপরিহার্য। টেকসই উন্নয়ন ও শিল্প-বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও তাদের ন্যায্য অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে হবে।


আরও খবর



ঢাকায় এসেছেন ডোনাল্ড লু

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ | ৫৭জন দেখেছেন

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক:ঢাকায় এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু দুই দিনের সফরে । বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথমবার ঢাকা সফরে এলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এ কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা ১১টার পর কলম্বো থেকে ঢাকায় এসেছেন ডোনাল্ড লু।

জানা যায়, ঢাকা সফরের সময় লু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে হতে যাওয়া বৈঠকগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রম অধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা ইস্যু, প্রতিরক্ষাসহ নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা করবেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান বিষয়গুলো গণতন্ত্র, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা অব্যাহত রাখবে ওয়াশিংটন।

লু ঢাকা সফরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নৈশভোজে যোগ দেবেন। এদিন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের কথা রয়েছে তার। এ ছাড়া একটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন তিনি।

সফরের দ্বিতীয় দিনে লু প্রথমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ও পরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করবেন। এরপর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়, ১০ থেকে ১৫ মে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ সফর করবেন ডোনাল্ড লু। তার এ সফরের মধ্যদিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার হবে বলে প্রত্যাশা ওয়াশিংটনের। যুক্তরাষ্ট্র যে একটি মুক্ত, অবাধ ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দেখতে চায়, ডোনাল্ড লুর সফরে সেটাই গুরুত্ব পাবে।


আরও খবর