মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুর প্রতিনিধি:হলুদে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ। চারিদিকে হলদে আভার দেখা মেলে। মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সরিষার চাষ শুরু হয়েছে ব্যাপকহারে। ফসলটি চাষে প্রতি মৌসুমেই কৃষকদের উৎসাহ বাড়ছে। আবহাওয়া অনুকুল হওয়া আর বাজারে চাহিদা ও ন্যয্যমূল্য পাওয়ায় সরিষা চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা। কৃষি অফিস বলছে, স্থানীয়ভাবে তেলের ঘাটতি পুরুনের জন্য কৃষি বিভাগ প্রণোদনা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছে।
জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের সরিষার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ধুলা আর কুয়াশায় ধূসর প্রান্তরের মাঝেও দূর থেকে চোখে ভেসে উঠে সরিষার হলুদ। বিস্তীর্ণ মাঠের চারদিকে হলুদের সমাহার। মাঘের ভর শীতেও প্রকৃতিতে মনে হচ্ছে বসন্তের ছোঁয়া।
নানা রঙের প্রজাপতিতে ভরে আছে সরিষার ক্ষেত। নীল, সবুজ, লাল-নীলের ডোরাকাটা বিভিন্ন রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। কোথাও ঝলক দিয়ে উঠছে কালো ডানায় হলুদ-লালের মিশ্রণ। রঙ-বেরঙের প্রজাপতির এমন ডানা ঝাপটানো হৃদয়ে জাগাবে নবতর আনন্দ। প্রজাপতিরা এখানে আসে বিশ্রাম নিতে। অনেক দূর উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়ানোর পর সরিষার মাদকতা তাদের আকৃষ্ট করে। প্রজাপতির সঙ্গে ভ্রমরও মধু খুঁজে ফিরছে এই ফুলে। এই সুযোগে মৌয়ালরা মৌমাছি চাষ করে এই মধু সংগ্রহ করছেন সরিষার মাঠে।
বিভিন্ন মাঠে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন বয়সি লোকজন সরিষার হলুদ ক্ষেতে বেড়াতে আসছেন। অনেকেই আসছেন বন্ধু বান্ধব নিয়ে ছবি তুলতে। কেউ বা বানাচ্ছেন টিকটক ভিডিও। দেখা গেছে মালসাদহ মাঠের মধ্যে স্কুল শিক্ষক ইছারদ্দীনের রচিত ‘মোড়ল ধরা পড়েছে’ গ্রামীণ নাটকের শুটিং। স্থানীয়রাও মনভরে উপভোগ করছেন এসব। সরিষার ঝাঁজালো ঘ্রাণে মুখরিত চারদিক। বেশিরভাগই ফুলে এই সময়ে গন্ধ থাকে না কেবল সরিষা ফুল ছাড়া। এ ঘ্রাণে ফুসফুসের উপকার হয়।
জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে সরিষার আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১৩৫ হেক্টর। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছে ৯ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় সরিষা জাতের পাশাপাশি বারি সরিষা ১৪, ১৫, ১৭,বিনা ৯,৪, ১১ ও টোরি ১৭ সরিষা চাষ করেছেন। কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত ভোজ্য তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও বাজারে সরিষার চাহিদা থাকায় চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন । অনেকেই দো-ফসলি জমিতে সরিষা আবাদ করছেন। আবার অনেকেই সাথী ফসল হিসেবে ও সরিষা আবাদ করছেন।
জোড়পুকুর গ্রামের আব্দুর রশিদ জানন, তিনি এক বিঘা জমিতে সরিষা বপন করেছেন এবং আরো দুই বিঘা সাথী ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন। তিনি আরো জানান, জমিতে ধান থাকতে থাকতে সরিষার বীজ বপন করে দেওয়া হয়। এত খরচ কম হয় লাভ বেশি। তিনি আড়াই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার সরিষা বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
বামন্দীর সৈকত আলী জানান, প্রতি বছর আমন ধান কাটার পর জমিতে সরিষা চাষ করি। সরিষা বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যায় ওই টাকা দিয়ে আবার ইরি ধানের আবাদ করি। সরিষা চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হয়। এক বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ সরিষা হচ্ছে। গেল বছরে সরিষার দাম বেড়েছে। তিনি এবার তিন বিঘা সরিষা চাষ করেছেন। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অধিক মুনাফার জন্য কয়েক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করা হয়। হাড়াভাঙ্গা গ্রামের চাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তেলের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় নিজেদের প্রয়োজনে সরিষা চাষ করেন।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, গেল বছরে চলতি বছরে সরিষার আবাদ লক্ষমাত্রার চেয়ে বেড়েছে। চাষিদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে সরিষা চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য। স্থানীয়ভাবে যে পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে দূর্যোগ না হলে বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।