Logo
আজঃ শনিবার ১৮ মে ২০২৪
শিরোনাম
টাঙ্গাইলের মধুপুরে নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানের গন সংবর্ধনা নবীনগরে ভেকু দিয়ে মাটি কাটতে গিয়ে বৈদ্যুতিক তাঁর ছিঁড়ে একজনের মৃত্যু যাত্রাবাড়ীতে অঞ্জাত ব্যাক্তির মরদেহ উদ্ধার রূপগঞ্জে নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিব বাংলাদেশে আবারো শুরু হচ্ছে বার্সা একাডেমির ট্রেনিং ক্যাম্প রেলপথ মন্ত্রী কতৃক মাগুরার নির্মানাধীন রেলপথ নির্মান প্রকল্প পরিদর্শন প্রচারণায় জমে উঠেছে আত্রাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দেশ ও জনগণের স্বার্থে সবাইকে কাজ করতে হবে: রাষ্ট্রপতি ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫টি ইউনিট ব্যাংকের ৩০ এমডি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন

মান্দায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ | ১০৭জন দেখেছেন

Image

এম এম হারুন আল রশীদ হীরা; নওগাঁ:নওগাঁর মান্দায় তুচ্ছ ঘটনায় এক সন্তানের জনক সাদেকুল ইসলাম ওরফে ছোটন (২৬) নামে এক যুবকের পিটিয়ে  হত্যার ঘটনায় অবশেষে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বাবা আবদুর রাজ্জাক সোমবার (১৫ এপ্রিল) অভিযুক্ত সাগর হোসেনকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত কয়েক জনের বিরুদ্ধে এ হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনাটি উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়নের বাদলঘাটা গ্রামে ঘটেছে।

নিহত সাদেকুল ইসলাম ছোটন বাদলঘাটা গ্রামের চা বিক্রেতা আবদুর রাজ্জাকের ছেলে। রোববার রাত আড়াইটার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন তিনি । হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত সাগর হোসেন (৩০) একই গ্রামের হযরতুল্যাহ মন্ডলের ছেলে। ঘটনার পর থেকে সাগরের পরিবারের  সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।স্থানীয়রা জানান,নিহতের বাবা একজন চা বিক্রেতা।তিনি চা বিক্রি করেই জীবন-যাপন করেন। তিনি গ্রামের একজন অসহায় মানুষ। এ কারণে প্রতিবেশি আশরাফ আলী’র ছেলে জামাল উদ্দিন নামে এক আ’লীগ নেতা তাকে দোকানঘর করার জন্য কিছু জমি দেয়। তার দেওয়া জমিতে দোকানঘর তৈরি করে চা- ব্যবসা করে আসছিলেন। আশরাফ আলীর ছেলে জামাল উদ্দিন গংদের সাথে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে অভিযুক্ত সাগর গত (১১ এপ্রিল) শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহতের বাবা আবদুর রাজ্জাকের দোকান উচ্ছেদের জন্য ভাংচুর শুরু করেন। ওইসময় দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নিহত ছোটন। এরই এক পর্যায়ে নিহত ছোটনের শরীরে একটি বাঁশের কাবাড়ি’র সজোরে আঘাত লাগে।  ওইসময় তিরি প্রতিবাদ করলে তার মাথায় কাঠের বাটাম (লাঠি) দিয়ে সজোরে আঘাত করে অভিযুক্ত সাগর । এতে ঘটনা স্থলেই মাটিতে লুটে পড়েন নিহত সাদেকুল ইসলাম ছোটন। পরবর্তীতে তাকে আরো একাধিক আঘাত করা হয় বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এরপর স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে স্থানান্তর করার জন্য পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে রামেকে নেওয়ার পর তার শারিরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মর্ডান ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দেন। ঘটনার ৩ দিনপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন,এঘটনায় নিহতের বাবা আবদুর রাজ্জাক বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত সাগরকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।


আরও খবর



ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ কর্তৃক ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালকদের ব্রিফিং

প্রকাশিত:শনিবার ১১ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ | ১৭৯জন দেখেছেন

Image

নাজমুল হাসানঃঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরীর সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের  শৃঙ্খলা আনয়নের পাশাপাশি  যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কাজ করে যাচ্ছে টিম ট্রাফিক ডিএমপি। ঢাকা শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ মূল সড়কের ব্যাটারি রিকশা। সীমিত সংখ্যক ট্রাফিক সদস্য দিয়ে বিশাল সংখ্যক ব্যাটারি রিকশাকে মূল সড়কে আসতে প্রতিহত করা কষ্টসাধ্য বিষয়। তাছাড়া ব্যাটারি রিক্সা মোটরযান না হওয়ায় এবং সড়ক পরিবহন  আইন প্রয়োগের আওতাভুক্ত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভবপর নয়। তাই ব্যাটারী রিকশাকে মূল সড়কে এসে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি তাদের চালকদের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ প্রচারণা ও ব্রিফিং করে যাচ্ছে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগ। 

এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ট্রাফিক ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আশরাফ ইমামের নেতৃত্বে ও এডিসি (ট্রাফিক ওয়ারী) সুলতানা ইশরাত জাহানের তদারকিতে কাজ করছেন এসি (ট্রাফিক যাত্রাবাড়ী জোন) তানজিল আহমেদ। 

শুক্রবার ১০ মে তানজিল আহমেদ সঙ্গীয় টিআই মাহমুদসহ  বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক সচেতনতা/নির্দেশনামূলক ব্যানার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। যাত্রাবাড়ী মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের গুরুত্বপূর্ণ ধোলাইপার গোল চত্তরে মহাসড়কে রিক্সা/ব্যাটারী চালিত রিক্সা চলাচল ও পারাপার নিরুৎসাহিত করতে চালক ও জনগণের মধ্যে সচেতনামূলকমূলক ব্রিফিং করা হয়। পর্যায়ক্রমে এটা আরো বৃদ্ধি করা হবে বলে ডিসি (ট্রাফিক ওয়ারী) জানান।


আরও খবর



ঢাকায় ডিএমপির অভিযানে মাদকসহ গ্রেপ্তার ২৪

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ | ৮৬জন দেখেছেন

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক:ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ।

মঙ্গলবার (৭ মে) সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের হেফাজত থেকে ১৫৫ পিস ইয়াবা, ১৭৬ গ্রাম হেরোইন ও ১৭ কেজি ৪০ গ্রাম গাঁজা জব্দ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৮টি মামলা করা হয়েছে।


আরও খবর



ঢাকায় নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড স্লেটন মিল

প্রকাশিত:শুক্রবার ১০ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ | ৮০জন দেখেছেন

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলকে মনোনীত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তি‌নি বর্তমা‌নে বেইজিংয়ে মা‌র্কিন দূতাবা‌সে ডেপুটি চিফ অব মিশনের দায়িত্ব পালন কর‌ছেন।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ মে) প্রেসিডেন্ট বাইডেন বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলের নাম ঘোষণা ক‌রেন।

বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক মিলের মনোনয়ন এরই মধ্যে সি‌নেটে পাঠানো হয়েছে। সিনেটে শুনানির পর মিলকে যোগ্য মনে হলে তবেই মনোনয়ন চূড়ান্ত ক‌রে রাষ্ট্রদূত করে তাকে ঢাকায় পাঠানো হ‌বে। মিল ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হলে বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের স্থলা‌ভি‌ষিক্ত হ‌বেন।

জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক মিল বেইজিংয়ে দা‌য়ি‌ত্ব পাল‌নের আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইকোনমিক ব্যুরোর ট্রেড পলিসি অ্যান্ড নেগোসিয়েশন বিভাগের উপ-সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগের পরিচালক ছিলেন তিনি।

মিনিস্টার কাউন্সেলর হিসেবে ১৯৯২ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। এরপর ওয়াশিংটনের ফরেইন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের লিডারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট স্কুলের সহযোগী ডিন, ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ডেভিড স্লেটন মিল।


আরও খবর



চাচির চল্লিশার আয়োজনকে ঘিরে রাতে সংঘর্ষে নিহত১ আহত অনেকে!

প্রকাশিত:বুধবার ১৫ মে ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ | ৪৩জন দেখেছেন

Image
জেলা প্রতিনিধি কুষ্টিয়া:কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে মৃত চাচির কুলখানিকে কেন্দ্র করে সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে স্বজনদের হামলায় বকুল বিশ্বাস (৫৫) নামের একজন নিহত হয়েছেন ও আহত অনেকে সদর হাসপাতালে ভর্তি ।১৩ মে ২০২৪ইং সোমবার  রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত বকুল হাতিয়া গ্রামের মৃত আফতাব বিশ্বাসের ছেলে। তিনি পেশায় একজন চাল ব্যবসায়ী ছিলেন। এ ঘটনায় সাত/আট জন আহত হয়েছেন। হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন আগে নিহত বকুল বিশ্বাসের চাচি মারা যান। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। চাচির কুলখানি অন্য চাচাতো ভাইয়েরা বড় করে আয়োজন করে সমাজের লোকজনকে খাওয়ানোর দাবি তোলেন। এতে বকুল বিশ্বাস ও তার পরিবারের লোকজন রাজি হয়নি। গত শনিবার বকুল বিশ্বাস তাদের সমাজের লোকজন নিয়ে চাচির কুলখানির কাজ শেষ করেন। এরই জের ধরে রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে। নিহত বকুলের চাচাতো ভাই হামলায় আহত নিয়াজি খান জানান, গত বৃহস্পতিবার তার চাচি জাহানার খাতুন মারা যান। শনিবার কুলখানির আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনের রান্না ও দাওয়াত দেয়াকে কেন্দ্র করে আরেক চাচাতো ভাই শিপন বিশ্বাসের সঙ্গে আমাদের বিরোধ বাধে। শিপন বিশ্বাস আমাদের জানায় তার সমাজের লোকজন নিয়ে কুলখানির অনুষ্ঠান করতে হবে। এতে আমরা অসম্মতি জানায়। এরই জের ধরে সোমবার সন্ধ্যার পরে নিহত বকুলসহ আমরা কয়েকজন নিজ বাড়ির সামনে বসে থাকা অবস্থায় শিপন বিশ্বাসের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় বকুলসহ ছয়জন আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে নিলে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বকুল মারা যায়। শিপন বিশ্বাস নিজে নিহত বকুলের বুকে ফালা দিয়ে আঘাত করে বলেও দাবি করেন নিয়াজি খান। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদি হাসান বকুল হত্যার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে সামাজিক দ্বন্দ্বে স্বজনদের হামলায় বকুল নিহত হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। বকুল হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশ সাড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

আরও খবর



সাফল্য অর্জনকারী ৫ জয়িতার গল্প

প্রকাশিত:রবিবার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:শনিবার ১৮ মে ২০২৪ | ১৫৫জন দেখেছেন

Image
পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধি:জয়িতা হচ্ছে সমাজের সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল নারীর একটি প্রতিকী নাম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিক নির্দেশনায় ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে প্রতিবছর দেশব্যাপী “জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ” শীর্ষক অভিনব প্রচারাভিযানের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তৃণমূলের সফল নারী, তথা জয়িতাদের অনুপ্রাণিত করা। এরি ধারাবাহিকতায় নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় ২০২৪ সালে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিশেষ সাফল্য অর্জনকারী শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৫ জন আত্মপ্রত্যয়ী এবং সংগ্রামী নারী। তারা হলেনঃ

(১) অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী তাপসী রাবেয়াঃ নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর হরিরামপুর (দক্ষিণ) গ্রামের অধিবাসী এসএম রফিকুল ইসলামের মেয়ে তাপসী রাবেয়া একজন শিক্ষিত যুব নারী যার স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হবার। সেটাতে সফল হতে পারেনি। অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে বিসিএস পরীক্ষার ব্যর্থ হয়। তবে সে দমে যাবার মেয়ে নয়। ব্যথতায় হচ্ছে সফলতার স্তম্ভ বা খুঁটি এই মন্ত্রে  নতুন উদ্যমে নিজেকে সাজায় সে।

সমাজ, সংসারের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চাওয়া রাবেয়া তার সংসার জীবনে জমানো টাকা-গয়না আর আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করা টাকা দিয়ে একটি জমি ক্রয় করে। তারপর সেই জমিতে বাগান করে, পরিচর্যা করে। দুই বছর পর আম বিক্রি করে মোটামুটি ভালো অঙ্কের টাকা পায়। এইভাবে কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি হওয়া শুরু করে।

রাবেয়া জানান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার "একটি বাড়ি একটি খামার" এই প্রকল্পটি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমার স্বামীর জমিতে একটি খামার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেই। অক্লান্ত পরিশ্রম করে রোদে পুড়ে শ্রমিকদের সাথে হাতে হাত লাগিয়ে গড়ে তুলি "শাহ আলম এগ্রো" নামের একটি প্রতিষ্ঠান। যা একটি গবাদি পশু পালন, বায়োগ্যাস ও প্রাকৃতিক জৈব সার উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান। 

যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে আমি গবাদির পশুর যত্ন, খাদ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচর্যা, প্রাথমিক চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে। মৎস্য চাষ ও হাঁস-মুরগি পালন বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কিভাবে লাভজনক ভাবে করা যায় তা আয়ত্ত করে স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে দেশি মুরগি ও হাঁস পালন শুরু করি। এ লক্ষ্যে নিজস্ব হ্যাচারি স্থাপন করি খামারের মধ্যে। বাচ্চার বয়স আড়াই থেকে সাড়ে তিন মাস হলেই প্রতি চালানে (পাঁচশত) বিক্রি করে প্রায় দুই লক্ষ টাকা লাভ করি। এছাড়াও বিভিন্ন রকম মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি চাষ করে খামারের এক ইঞ্চি জায়গাও নষ্ট করিনি। 

খামারের এক প্রান্তে একটি ছোট পুকুর আছে। সেটার ধারেই হাঁসের সেড স্থাপন করি। সেই পুকুরে সমন্বিত মাছ চাষের পাশাপাশি শামুকও চাষ করি। ফলে হাঁসের খাদ্যের খরচ অর্ধেক লাগে। আবার হাঁসের বিষ্ঠাগুলো পুকুরের মাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। হাঁসের ডিম ও মাছ বিক্রি করে মোটামুটি ভালো অংকের অর্থ উপার্জন করি পাশাপাশি আমার পরিবারের আমিষের চাহিদাও পূরণ হয়।

আজ আমি কারো বোঝা নই। অর্থের জন্য এখন আমাকে আর কারো কাছে হাত পাতাতে হয় না। বরং আমি আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আর্থিক ভাবে সাহায্য করি। আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী ও গরিব অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি। আমি মনে করি অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন নারীদের সামাজিক মুক্তির একটি বড় মাধ্যম।

(২) শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী নিয়তি রানী উরাওঃ পত্নীতলা উপজেলার অন্তর্গত পত্নীতলা ইউনিয়নের বুজরুক মামুদপুর গ্রামে বসবাস ৩৮ বছর বয়সী নিয়তি রানী উড়াও এর। তিনি প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এবং স্বামী সন্তানদের ও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যার অন্য একটি পরিচিতি তিনি হলো মহীয়সী নারী।

বাবা শ্রীমন্ত উরাও ও মা যামিনী উরাও এর পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম সন্তান। তিনি ছিলেন একটু ভিন্ন প্রকৃতি কর্মচঞ্চল হাসিমাখা মুখের অধিকারী। তার বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈনতায়। তিন বেলা তাদের খাবার যোগাড় ছিল না। 

পড়ালেখা করা খুবই কঠিন হয়ে ওঠে। নিয়তি রানী উড়াও তাই নিজের প্রচেষ্টায় লোকের বাড়িতে দিনমজুরি কাজ করে টাকা জোগাড় করে পড়ালেখার খরচ চালাতো। এভাবে সে জয়পুরহাট খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন। একইভাবে সে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আর্থিক অনটনের কারণে বাধ্য হয়ে বিবাহ জীবনে আবদ্ধ হন।

নতুন সংসার জীবন শুরু হয়। বছর না যেতেই তার কোলে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ঘর আলো করে আসে। পরিবারের আর্থিক অনটনের জন্য এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের এ.এন.পি স্কুলে ৪ বছর চালানোর পর দুই বছর পিপিএস বিদ্যালয় শিক্ষকতায় আবদ্ধ হন।

এরপর এনজিও সংস্থা আশ্রয় ৪ প্লাস শিশুর শিক্ষকতা করেন। এরই মধ্যে সার্বিক কল্যাণে সমাজের ক্ষেত্রে নারী নেত্রী হিসেবে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এর বাংলাদেশ নারীনেত্রী প্রশিক্ষণে চারদিন ব্যাপী জয়পুরহাটে টিএমএসএস তে ১৫০তম ব্যাচে অংশগ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি তার জীবনের মিল খুঁজে পান। এই প্রশিক্ষণের সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে মিশার সুযোগ হয় মানুষকে চেনা এবং তাদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে তা খুব ভালোভাবে আয়ত্ব করেন নিয়তি রানী। সামাজিক সমস্যার সমাধানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এলাকায় নারীদের সংঘটিত করে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপোষের নেত্রী হিসেবে তিনি এলাকায় সুপরিচিত। এখন তিনি দ্যা হাঙ্গার প্রজেক্ট এর পুষ্টি উজ্জীবক হিসেবে সমাজ সেবায় স্বেচ্ছাসেবিকার কাজ করে চলেছেন। মানুষদের স্বাস্থ্য সম্মত জীবন যাপন এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে থাকেন। তিনি বিভিন্ন দিবসে নিজের গ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন এলাকার তরুণ এবং বেকার যুবক যুবতীদের আয়বর্ধক কাজে যুক্ত করে সকলের কাছে নিয়তি দিদি জনপ্রিয় মানুষের পরিণত হয়েছেন।

নিয়তি রাণী মনে করেন মানুষ বাঁচে তার কর্মের মাধ্যমে, বয়স এখানে মুখ্য বিষয় নয়। অন্যের জীবনের ভরসার পাত্র কয়জনায় বা হতে পারে? যারা সমাজে মানুষের বিপদে- আপদে পাশে দাঁড়ায়, কাজ করে তারাই প্রকৃত মানুষ।

(৩) সফল জননী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা প্রতিমা রানীঃ পত্নীতলা উপজেলার পত্নীতলা ইউনিয়নের বোরাম গ্রামের শ্রী সন্তোষ চন্দ্র দাসের স্ত্রী প্রতিমা রানী। বাবা হরেন্দ্র নাথ মন্ডল ও মাতা কাদম্বীনি মন্ডলের ৪ সন্তানের মধ্যে প্রতিমা রানী তৃতীয় সন্তান। বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈন্যতায়। তিনবেলা তাদের খাবার জুটতোনা। লেখাপড়া তো দূরের কথা। স্কুলের গন্ডি পেরুনো ভাগ্যে জোটেনি। দৈন্যতার কারণে একেবারেই অল্প বয়সে বিয়ে হয় তার। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির অস্বাভাবিক নির্যাতন আর সংসারে অভাব অনটনের মধ্যে সদ্য বিয়ের ১ বছরেই মাথায় জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান। এভাবে সুখে দুঃখে খরকুটু দিয়ে সংসার গড়তে গড়তেই ঠিক ৩ বছর পর তাদের আরও একটি পুত্র সন্তানের জন্য হয়। দুই ছেলে ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে কোন রকমে দিন কাটতো তারই মধ্যে তাদের সংসার আলো করে আসে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। হাটি হাটি পা পা করে সংসার এগুতেই শুরু হয় সন্তানদের লেখাপড়ার খরচের চাপ।

অভাবের সংসার চালাতে অর্থের প্রয়োজন পড়লে তিনি পড়ে যান অর্থনৈতিক দৈনদশার মধ্যে। পাশের গ্রাম কাঁটাবাড়ীর এক বাবুর নিকট থেকে কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। পাশাপাশি কিছু গরু-ছাগল, হাঁস, মুরগি ইত্যাদি নানা ধরনের উৎস থেকে ইনকাম দিয়ে কোন রকমে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া চালাতে থাকেন। আস্তেই সন্তানরা উঁচু ক্লাসে উঠে আর লেখাপড়ার খরচও বেশি হতে থাকে। এদিকে সন্তানেরা ক্লাস ফাইভে ও এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এস.এস.সিতে লেটার মার্ক নিয়ে ফাস্ট ডিভিশনে ফাস্ট হয়। এইদিকে অভাবের সংসার প্রতিবেশি লোকজনদের তিরস্কার, সামাজিক কুসংস্কার, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সবকিছু উপেক্ষা করে নিজের শেষটুকু দিয়ে প্রচেষ্টায় সন্তানদের মেধা ও হার না মানা পরিশ্রমের ফলে আজ তিনি সত্যিকারের একজন স্বশিক্ষিত মা হিসেবে সমাজে পরিচিত এবং প্রতিষ্ঠিত।

প্রতিমা রানী'র বড় ছেলে স্বপন কুমার দাস এখন সিনিয়র অফিসার জনতা ব্যাংক লিমিটেড, ছোট ছেলে অনুপ কুমার দাস সিভিল ইঞ্জিনিয়ার সিনিয়র ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার, নাভানা রিয়েল স্টেট লিমিটেড, আর মেয়ে কৃষ্ণাশ্রী দাস সহকারী শিক্ষিকা কাঁটাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সন্তানদের জীবনে ভরসার পাত্র কয়জন মা'ই বা হতে পারে। যারা সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কিন্তু প্রতিমা রানী একজন মহীয়সী মা হিসেবে সন্তানদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন।

(৪) নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা মান্টি রানী দাসঃ পত্নীতলা উপজেলায় নজিপুর পৌরসভা মামুদপুর গ্রামের অসিম কুমার দাস এর মেয়ে মান্টি রানী দাস। বাবা মার প্রথম সন্তান হওয়ায় মান্টি রানী কৈশর কেটেছিল হেঁসে খেলেই। কিন্তু এই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হয়না। বাবা অসুস্থ হওয়ায় সংসারে অভাবের কারণে ২০০৮ সালে তাকে বাধ্য হতে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বেশি দিন ভালো থাকা হয়নি তার। নিজের জীবন এবং সংসার সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না তার। একে তো বাল্যকালে বিয়ে আবার অকালে সন্তান ধারণ। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর এবং স্বামীর কটু কথা এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। বাচ্চা হওয়ার দীর্ঘ ৯ মাস পরে মান্টির স্বামী মান্টিকে নিতে আসে এবং মান্টিকে নিয়ে যায় শ্বশুড় বাড়ীতে। আবারো তার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। এক পর্যায়ে মান্টির শশুর বাড়ির লোকেরা মান্টি ও তার না-বালক সন্তানকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মান্টির বাবা- মা বাধ্য হয়ে মান্টিকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে আসে। এক পর্যায়ে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে ২০২১ সালে তার সংসার জীবনের ইতি ঘটে।

এরপর মান্টি সেলাই মেশিন পরিচালনার কাজ শেখে। বাবার অভাবী সংসার থেকেই কষ্ট করে একটি সেলাই মেশিন ক্রয় করে পোশাক তৈরির কাজ শুরু করে। সেলাই মেশিনের ক্ষুদ্র আয় থেকে একটি গরু ক্রয় করে। গরু বড় হলে তা বিক্রয় করে একটি ছোট সিট-কাপরের দোকান দেয়। পাশাপাশি মান্টি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এসএসসি পাশ করে। কারিগরি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করে। স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর মান্টি তার যোগত্যা দিয়ে প্রথমত একটি সোলার কোম্পানীতে চাকুরী, দ্বিতীয়ত- বেডো এনজিওতে মাঠকর্মী পদে, তৃতীয়ত-ব্রাক প্রতিষ্ঠানে হেলথ্ স্বাস্থ্য কর্মী পদে চাকুরি করে, চতুর্থ পর্যায়ে- পত্নীতলা উপজেলায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতায় ভিজিডি প্রকল্পতে ট্রেনার পদে কাজ করে, পঞ্চম ধাপে 'কিশোর- কিশোরী' প্রকল্পে আবৃতি শিক্ষক পদে চাকুরী করে ও চলমান। ষষ্ঠ ধাপে আদমশুমারি ও গৃহগণনা কাজে নিয়োজিত ও একইসঙ্গে মান্টি বাড়িতেই পার্লারের কাজ করে।

সামাজের কিছু কুসংস্কার মানুষ তাকে বিভিন্নভাবে অপবাদ দেয়। তাকে হেও করা চেষ্টা করে। তবুও সমাজের অন্য মেয়েদের অনুপ্রেরনা হয়ে আছে মান্টি। যা অন্যান্য মেয়েদের সামনে চলার উৎসাহ প্রদান করে। মান্টি বলেন স্বপ্ন দেখব জেগে থেকে। অন্যকেও দেখাতে উৎসাহিত করব এমন স্বপ্নই বাস্তবায়ন করতে চাই।

(৫) সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছে যে নারী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ জয়িতা সামিমা নাছরিনঃ পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষনপুর গ্রামের সামিমা নাছরিন মতিউর রহমান ও নুরজাহান বেগমের দ্বিতীয় সন্তান। যার বাল্যকাল কেটেছে চরম আর্থিক দৈন্যতায়। আর্থিক অবস্থা ভাল না হলেও মায়ের প্রচেষ্টায় নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলেন। 

শামীমা শংকরপুর দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৯৯৫ সালে দাখিল পাস করেন। কিন্তু অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও সামাজিক চাপে বাধ্য হয়ে শামীমার মা তার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একই গ্রামের মামুনুর রশিদের সাথে ২০০৫ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। সংসার জীবনে প্রায় শশুর শাশুড়ির নানা কথা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। যৌতুক হিসেবে টাকা-পয়সা দিতে না পারাই স্বাশুড়ির নির্যাতন এবং অনাহার সহ্য করতে হতো যা দেখে প্রতিবেশীরা খাবার এনে দিয়েছেন। 

অভাবের সংসার সাজাতে অর্থের প্রয়োজনে তিনি ব্রাক প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। স্কুলের শিক্ষকতার সময় ননদের নির্যাতনে বাবার বাড়িতে এসে দক্ষিণ লক্ষনপুর গ্রামের গ্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা শুরু করেন। এরই মধ্যে সার্বিক সাক্ষরতার আন্দোলন আনসার ভিডিপি গ্রাম উন্নয়ন দলের সভানেত্রী হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এর মধ্যে প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করে। দৈন্যতা দূরীভূত হতে থাকলে স্বামীও শামীমকে গুরুত্ব দিতে থাকেন। এরপর পত্নীতলা উপজেলা আশা ব্যাংক প্রজেক্ট মাঠকর্মী হিসেবে আকবরপুর ইউনিয়নের কার্যক্রম শুরু করেন সামাজিক সমস্যার সমাধানে সহায়তার মধ্য দিয়ে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে পরিচিতি হয়ে ওঠেন শামিমা। এছাড়াও বসতবাড়িতে সবজি চাষ, কম্পোস্ট তৈরি জৈব সার প্রস্তুত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সহায়তা বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে জড়িয়ে পড়েন শামীমা।

সামাজিক কাজের অংশগ্রহণ এর সুবাদে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে নানা শ্রেণী পেশা মানুষের সাথে মিশা সুযোগ হয়। যখনই তিনি বাড়িতে আসেন গ্রামের মানুষ অভাব অভিযোগ তাকে ব্যতীত করে তোলে। 

২০১৪ সালে গণ গবেষণা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ৩০ জন নারীকে নিয়ে সামিমা গড়ে তোলেন মুষ্টির চাল সমিতি। তিনি এখন এই সমতির সভাপতি এলাকার কেউ অসুস্থ হয়েছে শুনলে নিজে গিয়ে তাকে ডাক্তার দেখান। কিংবা হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। জমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা মীমাংসা, অসহায় পরিবারকে আইন সহায়তা, গ্রামের স্যানিটেশন ব্যবস্থা শততাগ উন্নতি করন, সকল শিশু বিদ্যালয় ভর্তি নিশ্চিত করন, গর্ভবতী ও পুষ্টি মায়ের পরিচর্যা করা, বিচার সালিশে মেয়েদের মতামতের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার মতো কাজ গুলো তিনি করে থাকেন।২০১৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদের গণ গবেষণা ফোরাম নির্বাচিত হলে তিনি সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। বিকশিত নারী নেটওয়ার্কের নারী নেত্রী হিসেবে ইউনিয়ন কমিটির কেশিয়ার ও জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। উপজেলা প্রতিবন্ধী কমিটির সদস্যও তিনি। এতাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

পরিবারের অন্যদের আস্থা অর্জন করে আজ সবার মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন শামীমা। পরিবারের যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে তিনি এখন প্রধান ভূমিকা পালন করেন। মানুষের আত্মশক্তিকে জাগিয়ে দিতে পারে সেই অজয়কে সহজে জয় করতে পারে শামীমা। আর কোন বাধাই তার চলার পথকে রুখতে পারেম না। পরিবর্তনশীন সমাজ সম্পর্কে শামীমার ভাবনা পরিষ্কার। তিনি সবার আগে নিজের মানসিকতা পাল্টিয়েছেন। আর সমাজ পরিবর্তনে ধনী-দরিদ্র কিংবা নারী পুরুষ আলাদা না রেখে সবাইকে মানুষ হিসেবে মূল্য দেওয়া এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে পাশাপাশি সমাজের শিক্ষিত ও জন প্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তাহলেই কেবল সমাজ পরিবর্তন করা সম্ভব।

আরও খবর