সাগর আহম্মেদ,কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের ভিতরে পাকিং করায় এক সাংবাদিকের গাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরেই ওই কর্মকর্তা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। সোমবার পর্যন্ত গাড়িটি তালাবন্ধ থাকায় নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন মহলের লোকজন।
এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী সাংবাদিক সূত্রে জানা গেছে, গত দ্বাদশ নির্বাচন সুষ্ঠ, সুন্দর নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ করার লক্ষে ঢাকার ধামরাই উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকীকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বদলি করা হয়। তিনি কালিয়াকৈরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর নৌকার বিপক্ষে কাজ করে সমালোচিত হন। এরপর তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে মাটি খেকোদের চারটি ভেকু জব্দ করে। এতে আলোচিত হলেও কয়েকদিন পরই জব্দকৃত ভেকু ছেড়ে দিয়ে আবারো সমালোচিত হন ওই কর্মকর্তা। পরে তার অলিখিত অনুমোদনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি খেঁকোরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। প্রায় অর্ধশত পয়েন্টে অবৈধ ভাবে ফসলি জমির মাটি, উচু জমি, খালের পাড়, টিলা, নদীর তীরসহ মাটি কাটার উৎসবে পরিণত হয়েছে। এসব বিষয়ে সংবাদ প্রচারের লক্ষ্যে ওই কর্মকর্তা বক্তব্য নিতে গেলে দুজন টেলিভিশন সাংবাদিকের ওপর চটে যান।
এক পর্যায় তার আনসার সদস্য দিয়ে ওই সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। ওই তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে তার অফিস থেকে বের করে দেন ওই কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, গত ৪ ফেব্রুয়ারী অবৈধ ইটভাটায় লোক দেখানো অভিযান করে তিনি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বৈষম্যের জরিমানায় ক্ষুব্দ হন ইটভাটার মালিক ও স্থানীয়রা। মনগড়া উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটি করে আরো বিতর্কিত হন ওই ইউএনও। এসব বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর আক্রোশে কালিয়াকৈর প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেনকে তার গাড়ি উপজেলা চত্ত্বরে পাকিং করতে নিষেধ করেন ওই কর্মকর্তা। এরপর থেকে ওই সাংবাদিক কয়েকদিন ধরে উপজেলা চত্ত্বরে তার গাড়ি রাখেন না। কিন্তু গত রোববার সকালে ওই সাংবাদিক তার গাড়িটি উপজেলা চত্ত্বরে রেখে অন্যত্র চলে যান। দুপুরের পরও তার নির্দেশে ওই সাংবাদিকের গাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেন তার দেহ রক্ষী আনসার সদস্য। পরে তালা সম্বলিত গাড়ির ছবি ওই সাংবাদিকের মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মুলত ইউএনও’র বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের জেরেই তিনি এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। সোমবার পর্যন্ত গাড়িটি তালাবন্ধ থাকায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিক ও সচেতন মহলের লোকজন। তারা বলছেন, আসলে দেশে সাংবাদিকরা এখন নিরাপদ না, সেখানে সাধারণ জনগন কতটুকু নিরাপদ আছে? তিনি এখানে যোগদানের পর থেকেই একের পর এক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এসব একজন ইউএনওর কারনে দেশের সকল ইউএনও, প্রশাসন ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান তারা। ওই গাড়ির মালিক সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিন আগে উপজেলা চত্বরে গাড়ি রাখায় ওই ইউএনর দেহ রক্ষী (আনসার) আমাকে গাড়ি রাখতে নিষেধ করেন। এর পরে আমি সেখানে আর গাড়ি রাখি না। কিন্তু রোববার অফিস সময়ে ওই চত্বরে গাড়ি রেখে বাহিরে গেলে গাড়িতে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
মাটি খেঁকোদের পক্ষে সাফাই গেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী জানান, যদি মাটি কাটা বন্ধ হলে বাড়িঘর হবে কিভাবে? আইনে নিয়ম না থাকলেও বাস্তবে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এছাড়া সাংবাদিকের গাড়িতে তালা ঝুলানোর বিষয়ে তিনি মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা পরিষদ পাকিংয়ের জায়গা না।
এখানে কেউ অবৈধ ভাবে পাকিং করলে আমরা তালা বদ্ধ করতেই পারি। এখানে বক্তব্য নেওয়ার দরকার নাই। তবে ওনার আসার দরকার বলে তিনি উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, এটা কি নিউজ করার বিষয়?