
নিজস্ব প্রতিবেদক ;দেশে চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে অনেকটা জ্যামিতিক হারে। মৃত্যুর হার বাড়ার গতি আরও বেশি। এ ছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো বর্তমানে ডেঙ্গুর চারটি ধরন একসঙ্গে সক্রিয় হয়ে পড়েছে। মূলত সে জন্যই মৃত্যু ও আক্রান্তের হারে এমন ঊর্ধ্বগতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, গত জুন মাসে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৭৩৭ জন। পরের মাসে রোগীর এই সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে হয় ১৫৭১ জন। আগস্ট মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫২১ জনে এবং সেপ্টেম্বরে বেড়েছে প্রায় তিনগুণ
৯৯১১ জন। আবার সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি ২১৯৩২ জন। চলতি নভেম্বরেও আক্রান্তের একই ধারা চলছে। মাসের ৮ দিন বাকি থাকতেই ২১ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৮৯ জন।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে জুন মাসে একজনের মৃত্যু হলেও পরের মাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ জনে। আগস্টে ১১ জন এবং সেপ্টেম্বরে আগের মাসের তুলনায় তিনগুণের বেশি ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। একইভাবে অক্টোবরে আগের মাসের তুলনায় মৃতের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ জনে। অন্যদিকে নভেম্বরের ২১ দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৯৩ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন একসঙ্গে সক্রিয় আছে। ফলে এ বছর প্রকোপ ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। কেউ কেউ দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। এর আগে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরামর্শক ড. এএসএম আলমগীর জানিয়েছিলেন, ঢাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেন ৩-এর সঙ্গে ডেন-৪ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কক্সবাজারে ডেন ৩-এর সঙ্গে ডেন-১ শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে এটি সারাদেশের চিত্র।
এদিকে দেশে আগের দিন সকাল ৮টা থেকে গতকাল একই সময় পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৬০৬ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ২৮৯ জন এবং ঢাকার বাইরে ৩১৭ জন চিকিৎসাধীন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট ২৩৪ জনের মৃত্যু হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে দুই হাজার ৩৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি হাসপাতালে এক হাজার ২৫৮ জন এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগে এক হাজার ৯৩ জন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৩ হাজার ৪১৩ জন। ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৩৬০ জন এবং ঢাকার বাইরে ১৯ হাজার ৫৩ জন। এ সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫০ হাজার ৮২৮ জন। ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৯৬২ জন ও ঢাকার বাইরে ১৭ হাজার ৮৬৬ জন।