সাগর আহম্মেদ,কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ শিশু ও নারীসহ ১৬জন নিহতের পর আবার অগ্নিকান্ডের ঘটনা! ওই আগুনের হাত থেকে অল্পের জন্য জীবন রক্ষা পেল প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। তবে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তাদের সর্বস্ব পুড়ে অঙ্গার। সোমবার রাতে উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ উত্তরপাড়া এলাকায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবার ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ মার্চ সন্ধ্যায় কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণের ঘটে। ওই সময় শিশু, নারী ও পুরুষের শরীরে আগুন লেগে ৩৬ জন দগ্ধ হন। পরে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা দগ্ধদের উদ্ধার করে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ২৩ মার্চ পর্যন্ত ১০ দিনে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ শিশু ও নারীসহ ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকীরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকলেও মৃত্যুর শঙ্কা যেন কাটছেই না। নিহতদের পরিবারের মধ্যে চলছে শোকের মাতম। ওই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শুধু দগ্ধদের পরিবারই নয়, আগুন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপজেলাবাসী। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার গভীর রাতে উপজেলার পল্লীবিদ্যুৎ উত্তরপাড়া এলাকার ফুটবল খেলার মাঠের পাশে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ওই এলাকার জনি মিয়া ও সোহেল মিয়া নামে দুই ব্যক্তির দুটি কলোনি ভাড়া নিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের লোকজন বসবাস করে আসছিলেন। প্রতিদিনের মতো তারা রাতের খাবার শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু রাত দেড়টার দিকে জনি মিয়ার ভাড়াটে শওকত হোসেনের ঝুটের গোডাউনে হঠাৎ আগুন জ¦লে উঠে। মুহুর্তের মধ্যে পাশের জনি ও সোহেলের দুটি টিনশেড কলোনিতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। প্রচন্ড তাপে তারা ঘুম থেকে জেগে আগুন দেখে আতকে উঠেন। তাড়াহুড়ো করে কোনো রকমে বাইরে বেড়িয়ে প্রাণ রক্ষা করেন তারা। পরে আগুন নেভাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ও কোনাবাড়ি ফায়ার সার্ভিসের ১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ১ ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনে পুড়ে গেছে ১টি ঝুটের গোডাউন, দুটি কলোনির ৩৮টি কক্ষ ও কক্ষের ভেতরে থাকা টাকা, টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল। গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দুটি কলোনির ৩৮টি কক্ষের প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের সর্বস্ব পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। এখন তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তবে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারসহ স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও তাৎক্ষণিকভাবে আগুনের সূত্রপাতের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ওই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রজত বিশ^াস, পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল আলম তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রত্যেক পরিবারকে এক হাজার টাকা ও ৩টি করে কম্বল বিতরণ করা হয়।
এক কলোনির মালিক জনি মিয়া জানান, কলোনির বাইরে ওই ঝুটের গোডাউন। এর আশপাশে প্রায় মাদক সেবীরা নেশা করে। হয়তো ওই নেশাখোরদের অবশিষ্ট বিড়ির আগুন থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে আগুনে পুড়ে আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী জানান, খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে এক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে আগুনের সূত্রপাতের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।
কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে প্রাথমিকভাবে কিছু নগদ টাকা ও কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ঈদের আগে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।