টাঙ্গাইলে প্রতারণা, চেক ডিসঅনার ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় অটবি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাসাইল আমলি আদালতের বিচারক মুছা. রুমা খাতুন এ পরোয়ানা জারি করেন।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) টাঙ্গাইল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এস আকবর খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, অটবির চেয়ারম্যান ফাল্গুনী কুন্ডু, তার ছেলে ও অটবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিমেষ কুন্ডু, মেয়ে ও অটবির পরিচালক অমিতি কুন্ডু, অটবির প্রধান হিসাব কর্মকর্তা শেখ আসাফুজ্জামান, প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা শাহেদ আলম ও ডেপুটি ম্যানেজার আবুল বাশারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মোহাম্মদ শামীম মিয়া অটবির লিমিটেডের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও কোম্পানি সচিব। তিনি টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল দক্ষিণ পাড়া এলাকার মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিনের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, অটবির লিমিটেডের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ শামীম মিয়াকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে কোম্পানির কাছে তার পাওনা বেতন-ভাতাদি, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
তিনি কোম্পানির কাছে ৯৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পাবেন। তাকে কোম্পানি থেকে কয়েকটি চেক দেওয়া হয়। তবে চেকগুলোতে টাকা না থাকায় সেগুলো ডিসঅনার হয়। পরে ওই ভুক্তভোগী কোম্পানির কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে উল্টো তাকে হুমকি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা শামীম মিয়া বাদী হয়ে গত ৫ মে টাঙ্গাইল চিফ জুডিসিয়াল আদালতে কোম্পানির মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
গত ১৪ মে আদালতে তাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ থাকলেও তারা হাজির না হওয়ায় মঙ্গলবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাসাইল আমলি আদালতের বিচারক।
মামলার বাদী ও অটবির সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম মিয়া বলেন, বেতন-ভাতাসহ পাওনা পরিশোধ না করেই অটবির মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা প্রতারণার আশ্রয় নেন। কোম্পানি থেকে পাঁচটি চেক দেওয়া হলেও একটি চেকের টাকা উত্তোলন করা গেছে। বাকি চারটি চেকের অধীনে টাকা লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পাওনা টাকা চাইতে গেলে হুমকিসহ লাঞ্ছিত করা হয়। এ কারণে অটবির মালিক, এমডি, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। ওই মামলায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানার খবর পেয়ে অটবির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা শাহেদ আলম ফোনে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অন্যথায় প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনায় ঢাকার বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। এর আগে ২০১৯ সালে গুলশান থানায় আরও একটি জিডি করা হয়েছিল।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আজহার জহুর খান জানান, প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও চেক ডিসঅনার মামলায় অটবির মালিকসহ ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয়েছিল। তবে আসামিরা আদালতে হাজির না হওয়ায় মঙ্গলবার তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
হুমকির বিষয়ে জানতে অটবির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা শাহেদ আলমের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, আদালত থেকে প্রায় প্রতিদিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আদালত থেকে আমাদের কাছে আসতে কিছু সময় লাগে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।