
নিজস্ব প্রতিবেদক; নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যারা শহীদ জিয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, যারা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করেন, যারা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, যারা তারেক রহমানের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, দয়া করে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে এখন কোনো সংঘাত করবেন না।’
আজ রোববার সকালে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিলে বিএনপি মহাসচিব এ কথা বলেন। এর আগে, সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা ভোলা যুবদলের চরফ্যাশনের কমিটি নিয়ে দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত হয়। পরে নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব কষ্ট হয় একদিকে আমার ভাইয়ের বুলেটবিদ্ধ মরদেহ (ছাত্র দলের নেতা নয়ন) পড়ে আছে মর্গের মধ্যে। আর আপনারা কমিটির জন্য এখানে হামলা করেন। এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আছেন। আমি অনুরোধ করবো তাদের নাম-ঠিকানা বের করে অবিলম্বে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করতে।’
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, জয়নাল আবেদীন (ভিপি জয়নাল), আব্দুল কুদ্দুস, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জোষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আবদুল সামাদ আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, এবিএম মোশাররফ হোসেন, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, এম এ মালেক, তাইফুল ইসলাম টিপু, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজীব আহসান, ইয়াসীন আলী, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, নজরুল ইসলাম তালুকদারসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
তারেকের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের এই দিনটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নেতা দীর্ঘ জীবন, সুস্থ স্বাস্থ্য এবং একই সঙ্গে তিনি দেশে ফিরে এসে নেতৃত্ব দিতে পারেন এজন্য আমরা দোয়া চাই, এই দোয়া আমরা চাইব, তার নেতৃত্বে আমরা যেন বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন করতে পারি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বিনা কারণে তাকে সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। হত্যা করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে। তারপরও দেখেন মানুষের স্বাধীনতার জন্য, মুক্তির জন্যে কতটা আবেগ, কতটা আকুতি। কেউ থেমে থাকছে না। শত বাধা-বিপত্তিকে উপেক্ষা করে মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করছে এই মুক্তির আন্দোলনের সঙ্গে। আমরা জীবনপণ লড়াই করছি। আমাদের সামনে বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। এই লড়াইয়ে, এই সংগ্রামে আমাদেরকে জয়ী হতে হবে- কোনো বিকল্প নাই। আপনাদের কাছে অনুরোধ করবো, সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে জীবন বাজি রেখে এই সংগ্রামের নেমে পড়েন সবাই।
চলমান আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, ভোলা, যশোরের দলের ৭ জন নেতাকর্মীর প্রাণ হারানোর প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্যে। আজকে সেই মুক্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের তারেক রহমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সোনারামপুর ইউনিয়নে আমাদের ছাত্রদলের যে নেতা প্রাণ হারিয়েছেন, শহীদ হয়েছে তার প্রতি আমরা আজকে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। নয়ন মিয়া তার নাম। গতকাল শনিবার তাকে আহতাবস্থা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সরাসরি গুলিতে তার পেটের সমস্ত নাড়ি-ভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। ডাক্তার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল কথা বললাম। খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে।’