ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি,সুনামগঞ্জের ছাতকে একাধিক মাটি ভরাট প্রকল্পের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে উপজেলাজুড়েই। কাজ না করে প্রকল্পের টাকা উত্তোলনের পর আত্মসাতের ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় এক ইউপি সদস্যা। তার এ অভিযোগ দায়ের করায় দূর্নীতির বিষয়ে শুরু হয়েছেন কলে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উপজেলা প্রশাসন থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি সাত দিনের মধ্যে তদন্ত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দায়েরের পর এলাকায় পক্ষে-বিপক্ষে পরস্পর বিরুধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা স্বপ্না বেগমকে গত ২৯ মে কুম্বায়ন গ্রামের মেস্ত্ররহাটির ২শ’ ফুট রাস্তার মাটি ভরাটের জন্য উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় থেকে ৪ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ করা হয়। এই মাটি ভরাট প্রকল্পে কাজের ইউপি সদস্য ও প্রকল্প চেয়ারম্যান স্বপ্না বেগম ২ মেট্রিকটন চাল উত্তোলনের পর ৬৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে ওই টাকা থেকে ৪০হাজার টাকায় মাটি ভরাটের কাজ করেন। এ বিষয়ে প্রকল্পের সেক্রেটারী ও ইউপি সদস্য আবদুল মুক্তাদির প্রকল্পের বাকি ২৫ হাজারসহ আরও ২মেট্রিকটন চাল বিক্রির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মহিলা ইউপি সদস্য স্বপ্না বেগমের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ দায়েরের পর তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। উপজেলার দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের ২০২১-২২/২০২২-২৩ইং অর্থ বছরে মাদরাসায় মাটি ভরাট, কবরস্থান ও ঈদগাহে মাটি ভরাটসহ মোট ৯টি প্রকল্পে প্রায় ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এ প্রকল্প গুলোতে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ এনে ওই ইউপি সদস্যা গত ১৭ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পাল্টা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের করেন। এর মধ্যে একটি প্রকল্পের অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর আত্মসাত করেছেন বলে তিনি তার দায়েরি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। মাটি ভরাট হয়নি অথচ অর্থ তুলে ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাতের এমন একাধিক প্রকল্পের কথা অভিযোগে তিনি তুলে ধরেন। ইউনিয়নের প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে পাল্টা পাল্টি অভিযোগ দায়েরের পর উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। এ ঘটনা নিয়ে গত ২৩ আগষ্ট দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় বাংলার মুখ বিভাগে ছাতকে রাস্তার মাটি ভরাট চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ২৬ লাখ টাকা আতœসাতের অভিযোগ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর গত ২৩ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে রয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কেএম মাহবুবুর রহমান।এদিকে, ইউনিয়নের টিআর/কাবিকা/কাবিটা ও নগদ টাকাসহ ৯টি প্রকল্পের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে নিস্পত্তির আবেদন করেন ইউপি সদস্যা স্বপ্না বেগম। গত ২১ আগষ্ট ওই লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ প্রকল্প কমিটির সদস্যবৃন্দ প্রকল্পগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করেন।রহস্যজনক কারণে অভিযোগকারী ইউপি সদস্যা স্বপ্না বেগম তার দায়েরকৃত প্রকল্প অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি তিনি বাতিলের আবেদন করেন। ভূইগাঁও ছেগাপাড়া গ্রামের মাফিজ আলী ও আছকন্দর আলী এবং কুম্বায়ন গ্রামের আবদুল মানিক, আফজল হোসেন, কামরান, জামিলসহ একাধিক লোকজনরা জানান, ইউনিয়নের সরকারি মাটি ভরাটসহ বিভিন্ন প্রকল্পগুলোতে অনিয়ম হয়েছে। মাটি ভরাট না করে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে বলে স্বপ্না মেম্বারনির দায়ের করা অভিযোগ থেকে তারা শুনেছেন। ছেগাপাড়া গ্রামের মুরব্বি মবশ্বির আলী বলেন, কয়েক টুকরি মাটি কুম্বায়ন পঞ্চায়েতি কবরস্থানে ফেলা হয়েছে। জয়নাল হাজারী বলেন, মাদরাসার মাঠে এক মুষ্টিও মাটি ফেলা হয়নি। কুম্বায়ন জামে মসজিদ কমিটির সেক্রটারী আবদুল মুক্তাদির ওরফে আকলু মিয়া বলেন, মসজিদের পুকুরে মাটি ভরাট করা হয়েছে। অভিযোগ নিস্পত্তির বিষয়ে ইউপি সদস্যা স্বপ্না বেগম বলেন, ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের অনুরোধে তার দায়েরকৃত লিখিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগটি নিস্পত্তি করা হয়।দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন ইউপি সদস্যা কর্তৃক তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে এটি সাজানো বলে তিনি দাবি করেন। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরের জামান চৌধুরী বলেন, এই বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বারগন আলোচনা করে নিস্পত্তি করেছেন বলে একটি আবেদন করেছেন। যেহেতু বিষয়টি সরকারি প্রকল্পের অর্থ-আত্মসাত সংক্রান্ত, সে কারনে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।