সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:খাগড়াছড়ির পানছড়িতে জনসাধারণের বিরুদ্ধে বিজিবির দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও আটক ব্যক্তিকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণসমাবেশ করেছে গণ অধিকার রক্ষা কমিটি।
শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সকাল সাড়ে ১০টায় লোগাং করল্যাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে বক্তারা আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বিজিবি কর্তৃক দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও আটক সুমন চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
সমাবেশে গণ অধিকার রক্ষা কমিটির আহব্বায়ক কালাচাঁদ চাকমার সভাপতিত্বে ও যুগ্ন আহ্বায়ক রমেল মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, লতিবান ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কিরন ত্রিপুরা, গণঅধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সুজাতা চাকমা, মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, নারী অধিকার রক্ষা কমিটির প্রতিনিধি সমিত্রা ত্রিপুরা, কার্বারী এসোসিয়েসনের সভাপতি হেমরঞ্জন চাকমা প্রমুখ।
সমাবেশে কালাচাঁদ চাকমা বলেন, রাষ্ট্রীয় আধা সামরিক বাহিনী বিজিবিকে আমরা শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। কিন্তু বিজিবির মধ্যেকার কতিপয় ব্যক্তি দুষ্কৃতিকারী কার্যকলাপ আমরা ঘৃনা করি ও নিন্দা জানাই। বিজিবি কর্তৃক যদি সাধারণ মানুষের টাকা কেড়ে নেওয়া না হত, বিজিবি সঠিক দায়িত্ব পালন করতো এবং তাদের কর্যকলাপ যদি ভালো হতো তাহলে গত ২৪ সেপ্টেম্বর এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতো না। বিজিবি ও সাধারণ মানুষের মধ্যেকার সমস্যা সৃষ্টি হতো না। আমরা বিজিবির এমন ন্যাকারজনক কর্মকাণ্ডকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমরা প্রশাসনের কাছে একটা সুষ্ঠু সমাধান আশা করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন তা করেনি, আমরা সুষ্ঠু সমাধান পাইনি। প্রশাসন সমাধান না করে উল্টো জনগণের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। যার কারণে আমরা নিজেকে এবং পানছড়িবাসীকে সুরক্ষার জন্য গণঅধিকার রক্ষা কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়েছি। এ কমিটি পানছড়িবাসীর ওপর হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানি করা হলে সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশন করে বলেন, সামনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কঠিন চীবর দান এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও দুর্গাপূজা। এ পরিস্থিতি জিইয়ে থাকলে এ বছর পানছড়িবাসী এ উৎসব উপভোগ করতে পারবো না। শাসকগোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ৬ শতাধিক মানুষের নামে হয়রানিমমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। প্রশাসন এ উৎসবকে কেন্দ্র করে তৎপরতা বাড়াবে আটক করবে। কাজেই, এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বিজিবি কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা আগামী ১৫ অক্টোবরের মাধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে তাহলে আগামীতে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।সমাবেশে মনিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, গত ২৪ তারিখে বিজিবি কর্তৃক দুই জনকে আটক করে ১২ লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেটা অন্যায়। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার সময় বিজিবি সদস্যরা জনগণের ওপর হামলা চালায়। এতে বিজিবির গুলিতে একজন আহত হয়েছিল। বিজিবি যদি মানুষের বন্ধু হতো তাহলে এমন ন্যাকারজনক কর্মকাণ্ড ঘটাতো না। বিজিবি তাদের ভূল না শুধরে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০০ জনকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, সাধারণ মানুষের নামে বিজিবি যে মামলা করা হয়েছে তা যদি প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে যে কোন পরিস্থিতির দায় তাদেরকে নিতে হবে।
তিনি অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গ্রেফতারকৃত সুমন চাকমাকে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান।
সুজাতা চাকমা বলেন, আজ আমাদের পিঠ দেয়ালে থেকে গেছে। গত ২৪ তারিখ বিজিবি কর্তৃক ১২ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। বিজিবি বলছে আটককৃত দুই ব্যক্তি টাকার উৎস, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স দেখাতে না পারায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে। আমরা বলতে চাই এক জন ব্যক্তির নিকট ১২ লক্ষ কেন ১২ কোটি টাকাও থাকতে পারে।
তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠীর আমাদের ওপর, জনগণের ওপর অন্যায় করছে, অত্যাচার চালাচ্ছে। আমরা একজন মানুষ হিসেবে এই অন্যায় অত্যাচর কখনো মেনে নিতে পারি না। আমাদের বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে যদি কোন জনগণের ওপর অন্যায় করা হয়, অত্যাচার করা হয় তাহলে এর বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। আপনারা সংগঠিত হয়ে অংগ্রহণ করবেন।পানছড়িতে বিজিবি কর্তৃক সাধারণ মানুষ হয়রানি শিকার হচ্ছে মন্তব্য করে সুজাতা চাকমা বলেন, পানছড়ি উপজেলায় বিভিন্ন জায়গায় পাহাগিরা নানাভাবে হয়রানি শিকার হচ্ছে। বিজিবির হয়রানিতে পাহাড়িরা ঠিকমত ব্যাবসা করতে পারছে না, আমাদের কষ্টে জমানো টাকা ভোগ করতে পারছি না। সরকার কর্তৃকও পাহাড়িরা বৈষম্যের শিকার হয়।তিনি সকল পরিস্থিতিতে মোকাবেলা করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লাড়াই সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সমাবেশে হেমরঞ্জন চাকমা বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর জনগণের প্রতিরোধ সংগ্রামের সাহসীকতাকে অভিবাদন ও কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি। আগামীতে এ রকম কিছু হলে, কোন সমস্যা দেখা দিলে সকলকে একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে। আমরা যদি একে অপরের সহযোগিতা না করি তাহলে আমাদের ওপর শাসকগোষ্ঠী প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতে থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ২৪ সেপ্টেম্বরের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি প্রকৃত সত্য আড়াল করে বিভিন্ন মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। পানছড়িবাসীর সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চলাচ্ছে। এ বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ লোগাং বিজিবি ক্যাম্পে এক ব্যবসায়ির সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা জব্দসহ দুই ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে আটকের ঘটনার জের ধরে এলাকাবাসীর সাথে বিজিবি সদস্যদের ধস্তাধস্তি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনায় বিজিবি ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৫০০/৬০০ জনকে আসামি করে হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে।