ক্রীড়া প্রতিবেদক:আফগানিস্তানকে বলা যায় একাই হারিয়ে দিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এই আফগানিস্তানের বোলিং লাইন-আপকে বলা হয়ে থাকে বিশ্বমানের। যে দলে আইপিএল কাঁপানো রশিদ খান, মুজিব উর রহমান কিংবা মোহাম্মদ নবীরা রয়েছেন সেই দলকে অন্তত ১৫ ওভার আগে ৮ উইকেটে হারতে হবে সেটা চিন্তার বাইরে।
ভারতের কাছে এক কথায় সহজ সমর্পণ করেছে আফগানিস্তান। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি আফগান ব্যাটাররা। বল হাতেও একই দশা হয়েছিল মিরাজ-শান্তদের বিপক্ষে।
আজ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিশ্বমানের বোলিং লাইন-আপের সামনে বেশ ভালোই জবাব দিয়েছিল হাশমতুল্লাহ-আজমতরা। তবে বল হাতে একেবারেই যাচ্ছেতাই ছিলেন মুজিব-রশিদরা।
২৭২ রান তাড়া করার লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রোহিত শর্মা ও ইশান কিষাণের জুটি ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় আফগানদের। দুজনের জুটি থামে দলীয় ১৫৬ রানের মাথায় ইশানের বিদায়ে। ৪৭ বলে ৪৭ রান করা ইশান ইবরাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দেন রশিদ খানের বলে।
তবে একপ্রান্তে রীতিমত ঝড় তোলেন রোহিত। এক ম্যাচে তিনটি রেকর্ড ভাঙেন ভারতের অধিনায়ক। মাত্র ২৯ বলে ৭টি চার ও ১ ছক্কায় পূর্ণ করেন অর্ধশতক। এরপর দ্রুত গতিতে রান তুলে পৌঁছে যান শতকের ঘরে। মাত্র ৬৩ বলে পূর্ণ করে ফেলেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে যা এখন ভারতের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরি।
এর আগে প্রায় ৪০ বছর আগে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কপিল দেব করেছিলেন ৭২ বলে সেঞ্চুরি। এছাড়া ভারতের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির তালিকায় রোহিত এখন পাঁচ নম্বরে।
শুরুতে ১৭ রান করে হয়েছেন ভারতের পক্ষে বিশ্বকাপে দ্রুততম ১ হাজার রানের মালিক। পেছনে ফেলেছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। যিনি বিশ্বকাপে ২০ ইনিংসে পূর্ণ করেন ১ হাজার রান। রোহিতের উপরে আছেন সমান ১৯ ইনিংস খেলা ডেভিড ওয়ার্নার।
এখানেই শেষ নয়, রোহিত ভেঙেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রিস গেইলের ৫৫৩ ছক্কার রেকর্ডও। ইনিংসের অষ্টম অভারের পঞ্চম বলে নাভিন উল হককে ডিপ স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে পেছনে ফেলেন উইন্ডিজ তারকাকে।
এক ম্যাচে তিন রেকর্ড করা রোহিতকে দলীয় ২০৫ রানের মাথায় বিদায় করেন রশিদ খান। ৮৪ বলে ১৬টি চার ও ৫ ছক্কায় ১৩১ রানের ইনিংস খেলেন হন বোল্ড।
এরপর বাকি কাজটা সারেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। বিরাট-শ্রেয়াসের ৬৮ রানের অনবদ্য জুটিতে ৮ উইকেটের জয় নিশ্চিত হয় ভারতের। বিরাট ৫৫ (৫৬) ও আইয়ার ২৫ (২৩) রানে অপরাজিত থেকে ছাড়েন মাঠ।
এর আগে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস জিতে ভারতের শক্তিশালী বোলিংয়ের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আফগানিস্তান। ব্যাট করতে নেমে টপ-অর্ডারের ব্যাটাররা সেভাবে রান তুলতে না পারলেও মিডল অর্ডারের কল্যাণে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৭১ রানের লড়াকু পুঁজি পেয়েছে আফগানিস্তান।
ওপেনিং জুটি ভাঙতে ভারতকে অপেক্ষা করতে হয়েছে সপ্তম ওভারের চতুর্থ বল পর্যন্ত। ইবরাহিম জাদরানকে ব্যক্তিগত ২২ (২৮) রানের মাথায় সাজঘরে ফেরান জসপ্রিত বুমরাহ।
এরপর ১৩তম ওভারের চতুর্থ বলে আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ২৮ বলে ২১ রান ফিরেন হার্দিক পান্ডিয়ার বলে শার্দুল ঠাকুরের হাতে ক্যাচ দিয়ে। পরের ওভারের প্রথম বলে রহমত শাহকে ১৬ রানে ফেরান শার্দুল।
৬৩ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটার হাশমতউল্লাহ শহিদি ও আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের জুটিতে বড় স্কোর গড়ার স্বপ্ন দেখে আফগানরা। হাশমত-আজমত দুজনেই পান অর্ধশতকের দেখা।
দুজনের ১২১ রানের জুটি ভাঙে দলীয় ১৮৪ রানের মাথায় আজমতউল্লাহর বিদায়ে। হার্দিক পান্ডিয়ার বল এজ হয়ে ভাঙে স্টাম্প। ৬৯ বলে ৬২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ফিরেন সাজঘরে।
একপ্রান্ত আগলে রাখা হাশমতউল্লাহ শেষ পর্যন্ত ৮৮ বলে ৮০ রানের ইনিংস খেলে দলকে ২২৫ রানে নিয়ে গিয়ে কুলদীপ যাদবের বলে হন লেগ বিফোর। এরপর মোহাম্মদ নবীর ১৯, রশিদ খানের ১৬ আর মুজিব উর রহমানের ১০ রানে ভর করে ৮ উইকেটে ২৭২ রান থামে আফগানরা।
ভারতের পক্ষে ৪টি উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ। ২ উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া ও ১টি করে উইকেট নেন শার্দুল ঠাকুর এবং কুলদীপ যাদব।